National Education Policy 1986 & Operation Black Board

 জাতীয় শিক্ষানীতি (National Education Policy)1986


ভূমিকা [Introduction]

জাতীয় শিক্ষানীতি (National Education Policy) হল সেই শিক্ষানীতি যে শিক্ষানীতিতে জাতীয় জীবনে সর্বাঙ্গীণ বিকাশ (All round Development) ঘটে, যে শিক্ষানীতিতে জাতীয় সংহতি (National Integration) এবং আন্তর্জাতিক সংহতি (International Integration) বোধের চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করে, যে নীতিতে অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সংস্কৃতির ধারার মধ্যে যোগসূত্র রচিত হয় এবং জাতীয় কল্যাণকর গড়ে ওঠে জীবনদর্শন। যে শিক্ষানীতিতে জাতীয় সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, আধ্যাত্মিক প্রভৃতি দিকে জাতিকে মানব চেতনায় সমৃদ্ধ করে জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে সকলকে সমান অধিকারের ভিত্তিতে আত্মিক বন্ধনে বাঁধে, সেই শিক্ষানীতি হল জাতীয় শিক্ষানীতি (National Educational Policy)। সুতরাং, জাতীয় শিক্ষানীতিই হল দেশের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। আমাদের পরাধীন ভারতে কয়েকটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হলেও বিশেষ ফলপ্রাপ্তি ঘটেনি, ঔপনিবেশিকতার (Colonial) বেড়াজাল থেকে শিক্ষা প্রক্রিয়ার মুক্তি ঘটেনি। স্বাধীনতার পর 1948 খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয় প্রথম 'বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন' বা 'রাধাকৃয়াণ কমিশন, 1948-1949'। 1952 খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয় 'মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন' বা 'মুদালিয়ার কমিশন, 1952-1953'। এরপর 1964 খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয় 'ভারতীয় শিক্ষা কমিশন' বা 'কোঠারি কমিশন, 1964-1966 কোঠারি কমিশন সেদিন জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের উদ্দেশ্যে বলেছিল, "Government of India should issue a statement on the National Policy in Education which should provide guidance in the state Government in preparing and implementing educational plans in their areas." কোঠারি কমিশন সেদিন জাতীয় শিক্ষানীতির যে বুনিয়াদ তৈরি করেছিলেন সেই বুনিয়াদের ওপর ভিত্তি করে 1968 এবং 1986 খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয়েছিল জাতীয় শিক্ষানীতি (National Education Policy) |1968 খ্রিস্টাব্দে যে জাতীয় শিক্ষানীতি (National Education Policy) রচিত হয়েছিল, সামাজিক বৈষম্য, মূল্যবোধের অবক্ষয় প্রভৃতি কারণে উক্ত শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হয়নি। তাই সাংবিধানিক কর্তব্যের দিকটা মাথায় রেখে সেদিন দেশের নেতৃবর্গ স্বাধীন ভারতে জাতীয় শিক্ষানীতির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন।

সংজ্ঞা (Definition): 1985 খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে জাতীয় শিক্ষানীতি নির্ধারণ করতে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীদের নিয়ে আলোচনা চক্রের আয়োজন করেছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেদিন বলেছিলেন, বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভারতের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে শক্ত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।তিনি দেশের সকল চিন্তাশীল ব্যক্তির সহমতের ভিত্তিতে একটি নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। এজন্য "Challenge of education, A policy perspective" নামে একটি আলোচনা পত্র প্রকাশিত হয়। উক্ত আলোচনা পত্রভিত্তিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ওপর কেন্দ্র করে জাতীয় শিক্ষানীতি, 1986 খ্রিস্টাব্দে জন্ম হয়। উক্ত জাতীয় শিক্ষানীতি 1986 খ্রিস্টাব্দের মে মাসে সংবিধানের উভয় সভার অনুমোদন লাভ করে। ওই অনুমোদিত শিক্ষা দলিলই হল আমাদের 'জাতীয় শিক্ষানীতি, 1986' (National Education Policy)।


শিক্ষার উদ্দেশ্য: ভারতবর্ষ মূলত কৃষিনির্ভর এক উন্নয়নশীল দেশ। অজ্ঞতার আঁধারে ডোবা ভারতের,সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ নানাদিকের যথার্থ বিকাশ ঘটানো কখনোই সম্ভবপর নয়, যতদিন না পর্যন্ত শিক্ষার প্রসারে যথার্থ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। তাই শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্য জাতীয় শিক্ষানীতিতে (1986 খ্রিস্টাব্দ) কয়েকটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় যেমন-প্রাথমিক শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষা, তপশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের জন্য শিক্ষা, দৈহিক শিক্ষা, নবোদয় বিদ্যালয়, উৎকর্ষ বা স্বশাসিত কলেজ প্রভৃতি।শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, "Education is a unique investment in the present and the future. The cardinal principle is the key to the National Policy on education." অর্থাৎ, শিক্ষা হল বর্তমান ও ভবিষ্যতে এক অতুলনীয় বিনিয়োগ। শিক্ষার ওই মৌলিক বা গুরুত্বপূর্ণ নীতির তাৎপর্য হল, আর্থিক বিনিয়োগে যেমন লাভ আসার সম্ভাবনা থাকে, তেমনি জাতীয় শিক্ষার মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যতে চাহিদা পূরণের প্রত্যাশা থাকে।

জাতীয় শিক্ষানীতি (1986) — উল্লেখযোগ্য বিষয়সমূহ(Notable Matters of National Education Policy, 1986)

জাতীয় শিক্ষানীতি (1986) ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো, লক্ষ্য, পদ্ধতি ও প্রয়োগকে আধুনিক ও সময়োপযোগী করে তুলতে বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রে পরিবর্তন ও উন্নতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলি নিম্নরূপ—

 (1) জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা – 10+2+3 কাঠামো

এই নীতিতে ভারতের সমস্ত স্কুল ও কলেজ শিক্ষার জন্য একক ধাঁচের কাঠামো স্থির করা হয়

শিক্ষা পর্যায় শ্রেণি বিবরণ

A. নিম্ন প্রাথমিক 1ম – 5ম মৌলিক শিক্ষা

B. উচ্চ প্রাথমিক 6ষ্ঠ – 8ম কিশোর মানসিক বিকাশ

C. মাধ্যমিক 9ম – 10ম সাধারণ শিক্ষা বাধ্যতামূলক

D. উচ্চ মাধ্যমিক 11ম – 12ম পেশাগত/প্রস্তুতিমূলক শিক্ষা

E. স্নাতক 3 বছর উচ্চশিক্ষার ভিত্তি

ফলে সারা দেশে শিক্ষার কাঠামোতে একরূপতা প্রতিষ্ঠিত হয়।


(2) সাম্যকেন্দ্রিক শিক্ষা (Equality in Education)

নারী–পুরুষের মধ্যে বৈষম্য দূর করা

পেশাগত ও কারিগরি শিক্ষায় নারীদের সমঅধিকার

সমাজের বঞ্চিত শ্রেণির শিক্ষায় বিশেষ সহায়তা

সুযোগের সাম্য — Education for All

উদ্দেশ্য: সকলের জন্য সমান শিক্ষার সুযোগ প্রদান।


 (3) প্রাথমিক শিক্ষার সর্বজনীনীকরণ (Universalization of Elementary Education)

১৪ বছর বয়স পর্যন্ত অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা

অকৃতকার্য প্রথা বাতিল (No Detention Policy)

প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নিশ্চিত করা

ন্যূনতম ২টি শ্রেণিকক্ষ

১ জন শিক্ষক + ১ জন শিক্ষিকা

মানচিত্র, চার্ট, খেলার সামগ্রী ইত্যাদি

লক্ষ্য: সকল শিশুর স্কুলভর্তি ও উপস্থিতি নিশ্চিত করা

4. মাধ্যমিক শিক্ষা: এই স্তরে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচিতে থাকবে মানবিক বিষয়, বিজ্ঞান, গণিত, সমাজবিজ্ঞান প্রভৃতি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যক্তিত্বের স্ফুরণ ঘটাতে ঐতিহাসিক চেতনা, সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্য, সমাজ চেতনা, জাতীয় সংহতির বিকাশ প্রভৃতি দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

5. উচ্চশিক্ষা: উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, বর্তমান কলেজগুলিকে উন্নতমানের কলেজে পরিণত করতে হবে। মান উন্নয়নের জন্য গবেষণার উৎসাহ দানের কথা বলা হয়েছে।

6. বৃত্তিমুখী শিক্ষা: বৃত্তিমুখী শিক্ষার জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খুলতে হবে। উৎপাদন উপযোগী কেন্দ্র যেমন-শিল্প ও কৃষি প্রভৃতির ওপর গুরুত্ব আরোপের কথা ব্যক্ত করা হয়েছে, ব্যস্ত করা হয়েছে কম্পিউটার শিক্ষার কথা।

7. বয়স্ক শিক্ষা: বয়স্ক শিক্ষার প্রসার কল্পে 14 বছর বয়স থেকে 34 বছর বয়স পর্যন্ত নিরক্ষর বয়স্কদের জন্য গ্রামাঞ্চলে শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করে প্রগতির পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। শিক্ষার প্রতি ধনাত্মক মনোভাব গঠনকল্পে রেডিয়ো, দূরদর্শন প্রভৃতি গণমাধ্যমকে কাজে লাগানোর কথাও বলা হয়েছে।

৪. প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা: একাত্মতা বোধের বিকাশের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার ব্যবস্থা করার জন্য 'জাতীয় শিক্ষানীতি, 1986'-তে বলা হয়েছে। তা ছাড়া প্রতিবন্ধীদের জন্য নতুন নতুন ছাত্রাবাস গড়ে দিতে হবে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যাতে প্রতিবন্ধীদের দায়িত্ব গ্রহণ করে সেজন্য সংস্থাগুলিকে উৎসাহিত করতে হবে।

9. তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের জন্য শিক্ষা: মানসিক শক্তির উৎকর্ষ সাধনের জন্য চর্মকার, হরিজন পরিবারের শিক্ষার্থীদের প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বৃত্তি দিতে হবে। তপশিলি শিক্ষার্থীদের জন্য জেলা সদরে ছাত্রাবাস নির্মাণ, আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে প্রাথমিক 'বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।

10. মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়: প্রগতির ধারাকে সমৃদ্ধ করতে 'জাতীয় শিক্ষানীতি, 1986'-তে মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা বলা হয়েছে।

11. গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়: মূল্যবোধের যথার্থ বিকাশ ঘটাতে জাতীর জনক মহাত্মা গান্ধির পথ অনুসরণে গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।

12. বিজ্ঞান শিক্ষা বৃত্তিমূলক দক্ষতার (Vocational Skill) ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিজ্ঞানে ও অঙ্ক শাস্ত্রকে আবশ্যিক করতে হবে, বাড়াতে হবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান চেতনা।

13. দৈহিক শিক্ষা: যেহেতু, দৈহিক বিকাশের মধ্য দিয়েই ঘটে মানসিক, সামাজিক, প্রাক্ষোভিক বিভিন্ন দিকের বিকাশ, সেহেতু দৈহিক বিকাশের জন্য খেলার মাঠ, খেলার সাজসরঞ্জাম, কোচ প্রভৃতির ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষণ পাঠ্যক্রমে যোগ ব্যায়ামের অন্তর্ভুক্তি থাকবে।

14.শিক্ষক: শিক্ষকতা বৃত্তিকে আদর্শস্থানে তুলে ধরতে মেধাবী তরুণ-তরুণীদের শিক্ষকতা বৃত্তিতে আনয়নে উৎসাহ দান, তাঁদের বেতন বৃদ্ধির ব্যবস্থা সহশিক্ষক নিয়োগ প্রভৃতি, শিক্ষকদের আচরণবিধি প্রণয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে গুরুত্ব আরোপের কথা বলা হয়েছে।

15.মূল্যায়ন: সেমিস্টার প্রথা আনয়ন, নম্বরের পরিবর্তে গ্রেড প্রথা প্রচলন, পরীক্ষায় নৈর্ব্যক্তিকতা, বহিঃপরীক্ষার দিকে ঝোঁক কমিয়ে অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের ওপর গুরুত্ব প্রদান প্রভৃতি ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়।

16. চাকরিতে ডিগ্রি বিযুক্তিকরণ: এখানে চাকরিকে ডিগ্রি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ডিগ্রি সর্ব সাফল্যের মূল চাবিকাঠি নয়। শিক্ষার প্রকৃত রূপ ডিগ্রির মাধ্যমে প্রতিফলিত হয় না।চিকিৎসাবিদ্যা, আইন, অধ্যাপনা, গবেষণা, ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি ক্ষেত্রগুলি ছাড়া শিক্ষাগত যোগ্যতায় প্রাধান্য দেওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। তবে বলা হয়েছে, কোনো কাজের জন্য কে নিযুক্ত হবেন তা জাতীয় স্তরে Standard Test-এর মাধ্যমে নির্ধারণ করা যেতে পারে।

17. নন্-ফরম্যাল শিক্ষাব্যবস্থা: আর্থসামাজিক কারণে বা অন্য কোনো কারণে যে সকল শিশু প্রথাগত শিক্ষা (Formal Education) থেকে বঞ্চিত হবে, তাদের জন্য নন-ফরম্যাল শিক্ষা (Non-Formal Education) ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়ার কথা দলিলে ব্যস্ত করা হয়েছে।

18. নবোদয় বিদ্যালয়: সারা দেশে প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের যথার্থ বিকাশের জন্য নবোদয় বিদ্যালয় (Nabodaya Vidyalaya) স্থাপনের কথা জাতীয় শিক্ষানীতি, 1986 খ্রিস্টাব্দে বলা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ভরতির জন্য পরীক্ষা দিয়ে ফলাফলের ভিত্তিতে নবোদয় বিদ্যালয়ে ভরতি হবে। এখানে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন চলবে। পাঠ্যক্রমের অন্তর্গত থাকবে কলা, বিজ্ঞান, বৃত্তিশিক্ষা প্রভৃতি। Central Advisory Board of Education, (C.A.B.E)-এর নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত এই বিদ্যালয় হবে আবাসিক। শিক্ষার্থীদের প্রবণতা, আগ্রহ, মানসিক ক্ষমতা প্রভৃতির দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

19. কম্পিউটার শিক্ষা: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির সঙ্গে তাল দিয়ে শিক্ষার্থীদের চলতে হবে। তাই 'জাতীয় শিক্ষানীতি, 1986' খ্রিস্টাব্দে কম্পিউটার শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

20. উৎকর্ষ বা স্বশাসিত কলেজ জাতীয় শিক্ষানীতি, 1986 খ্রিস্টাব্দে বলা হয়েছে যে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও রাজ্য সরকার সহমত হয়ে Excellent College (উৎকর্ষ মহাবিদ্যালয়) বা Autonomous College (স্বশাসিত মহাবিদ্যালয়)-এর স্বীকৃতি দেবে। মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত উক্ত মহাবিদ্যালয়গুলি স্বাধীনভাবে পাঠ্যক্রম রচনা, ভরতিনীতি নির্ধারণ, পরীক্ষাগ্রহণ প্রভৃতি করতে পারবে।

(a) স্বশাসিত কলেজগুলি প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট থাকবে। ওইসব কলেজকে পাঁচ বছরের জন্য স্বশাসনের দায়িত্ব দেওয়া হবে।

(b) স্বশাসিত কলেজগুলি নিজেরাই সিলেবাস, পাঠ্যক্রম, অভিজ্ঞানপত্র ইত্যাদি তৈরি করবে এবং নির্দিষ্ট সময় মতো ছাত্রদের পরীক্ষা নেবে।

(c) শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয় সংহতি বৃদ্ধির জন্য স্বশাসিত কলেজ গঠিত হবে।

(d) 1989 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে 500 স্বশাসিত কলেজ গঠিত হবে।

1986 খ্রিস্টাব্দের জাতীয় শিক্ষানীতির পুনর্বিবেচনার জন্য ভারত সরকারের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক (Ministry of Human Resource Development), 1990 খ্রিস্টাব্দের 7 মে আচার্য রামমূর্তির সভাপতিত্বে 17 জন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। সভাপতির নামানুসারে উক্ত কমিটিকে বলা হয় 'রামমূর্তি সমীক্ষা কমিটি' (Ramamurti Reveiw Committee) 


অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ড (Operation Black Board)

পরিচয় ও প্রেক্ষাপট

ভারতে প্রাথমিক শিক্ষার অবকাঠামোগত দুর্বলতা বহুদিনের সমস্যা ছিল। অনেক স্কুলে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, প্রশিক্ষিত শিক্ষক, শিক্ষাসামগ্রী, শৌচাগার–সবকিছুরই অভাব প্রকট ছিল। জাতীয় শিক্ষানীতি 1986 এই বাস্তব সংকট গভীরভাবে উপলব্ধি করে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে একটি বিশেষ কর্মপন্থা গ্রহণ করে, যার নাম দেওয়া হয়— “অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ড”।

এই কর্মসূচি কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক (Ministry of HRD) এর উদ্যোগে শুরু হয়।

অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ডের মূল উদ্দেশ্য ছিল—

1. প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির প্রাথমিক অবকাঠামো নিশ্চিত করা

2. প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা

3. গ্রাম ও পশ্চাদপদ অঞ্চলের স্কুলগুলিতে ন্যূনতম শিক্ষা সুবিধা পৌঁছে দেওয়া

4. বিদ্যালয়ত্যাগ হার কমানো ও শিক্ষার আকর্ষণ বৃদ্ধি করা


কর্মসূচি ও বাস্তবায়ন কৌশল

a.ভবন--প্রতিটি বিদ্যালয়ে কমপক্ষে ২টি বড়ো শ্রেণিকক্ষ নিশ্চিত করা

b.শিক্ষক--ন্যূনতম দুইজন প্রশিক্ষিত শিক্ষক (একজন পুরুষ ও একজন মহিলা) নিয়োগ

c.শিক্ষাসামগ্রী--ব্ল্যাকবোর্ড, মানচিত্র, চার্ট, লাইব্রেরি কর্নার, খেলাধুলার সামগ্রী সরবরাহ

d.স্বাস্থ্যবিধি--শৌচাগার ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা

e.প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা--শিশুবান্ধব ও খেলাভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতি অনুসরণ

f.শাস্তিমুক্ত শিক্ষা--শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো শারীরিক শাস্তি নয়

g. No Detention Policy--প্রাথমিক পর্যায়ে অকৃতকার্য না-করা — শিক্ষার্থী অপচয় কমানো


উপসংহার, অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ড ছিল ভারতীয় প্রাথমিক শিক্ষার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। শিক্ষাকে শিশুবান্ধব ও সবার জন্য সহজলভ্য করতে এই প্রকল্প বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে এবং পরবর্তীকালে সর্বশিক্ষা অভিযান (SSA)-সহ জাতীয় শিক্ষার বহু কর্মসূচির ভিত্তি স্থাপন করেছে।


উপসংহার : জাতীয় শিক্ষানীতি ১৯৮৬

জাতীয় শিক্ষানীতি ১৯৮৬ ভারতের শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুন দিশা প্রদানকারী একটি ঐতিহাসিক দলিল। এ নীতিতে শিক্ষাকে জাতীয় উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি হিসাবে চিহ্নিত করা হয় এবং সকলের জন্য শিক্ষা (Education for All) নিশ্চিত করার লক্ষ্য সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা সার্বজনীনকরণ, নারীশিক্ষার প্রসার, তপশিলি জাতি-উপজাতি ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর শিক্ষার উন্নয়ন, শারীরিক শিক্ষা, কর্মমুখী শিক্ষা, অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ডের মত কর্মসূচি—এসবের মাধ্যমে শিক্ষাকে সামাজিক সমতা প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার রূপে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়।তবে নীতির বিভিন্ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে পরিকল্পনা ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে পুরোপুরি সফল হওয়া সম্ভব হয়নি। তবুও, ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার মানোন্নয়ন, আধুনিকীকরণ এবং মানবসম্পদ বিকাশে এই নীতি একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিয়েছিল এবং ভবিষ্যতের শিক্ষা নীতি ও কর্মসূচির ভিত্তি স্থাপন করেছিল।অতএব, বলা যায়—জাতীয় শিক্ষানীতি ১৯৮৬ ভারতের শিক্ষা ইতিহাসে এক যুগান্তকারী মাইলফলক, যা শিক্ষাকে জাতীয় উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে প্রতিষ্ঠা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

Comments

Popular posts from this blog

National Education Policy (2020)

Charter Act of 1813 and Its Educational Implication.

National Policy on Education (1968)