National Knowledge Commission (2009)

National Knowledge Commission (2009) 

ভূমিকা

২১শ শতাব্দী হচ্ছে জ্ঞান, তথ্য ও উদ্ভাবনের যুগ। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখতে হলে কোনো দেশকে জ্ঞানভিত্তিক সমাজে রূপান্তরিত হওয়া অপরিহার্য। ভারতের সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে এই জ্ঞান-কেন্দ্রিক উন্নয়নের মূল স্রোতে যুক্ত করার লক্ষ্যে ভারত সরকার ২০০৫ সালে National Knowledge Commission (NKC) গঠন করে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর প্রত্যক্ষ উদ্যোগে এবং প্রযুক্তি বিপ্লবের অগ্রদূত স্যাম পিত্রোদার নেতৃত্বে এই কমিশন দেশব্যাপী শিক্ষা, গবেষণা, তথ্যপ্রযুক্তি, উদ্ভাবন, ভাষা, শিল্প-উৎপাদন ও ই-গভর্নেন্স ক্ষেত্রে কাঠামোগত সংস্কারের রূপরেখা তৈরি করে।

NKC-র মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের সর্বস্তরের মানুষের জন্য জ্ঞানপ্রাপ্তি, জ্ঞানসৃষ্টি ও জ্ঞানপ্রয়োগের পথকে সুসংগঠিত করা—যাতে ভারত কেবল জ্ঞানের ভোক্তা নয়, বরং জ্ঞানের উৎপাদক ও রপ্তানিকারক শক্তি হয়ে উঠতে পারে। তাই NKC-কে কেবল একটি কমিশন নয়, বরং ভারতের জ্ঞানবিপ্লবের নীলনকশা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।


গঠন ও প্রেক্ষাপট

NKC গঠিত হয় ১৩ জুন ২০০৫ সালে, তখনকার প্রধানমন্ত্রী Manmohan Singh কর্তৃক। 

চেয়ারম্যান ছিলেন Sam Pitroda। 

উদ্দেশ্য: ভারতকে ২১শ শতাব্দীর তথ্য-জ্ঞান-ভিত্তিক অর্থনীতিতে সক্ষম রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করা, শিক্ষার, গবেষণার, জ্ঞানপ্রবাহের ক্ষেত্রে সংস্কার আনা। 

NKC বিভিন্ন বিভাগের জন্য কাজ করেছে—শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কৃষি, শিল্প, ই-গভর্নেন্স। 


মূল ধারণা ও “Knowledge Pentagon” মডেল

NKC-র কাজকে সহজে বোঝাতে Knowledge Pentagon মডেল প্রস্তাব করা হয়, যাতে পাঁচটি উপাদান রয়েছে:

1. Access to Knowledge (জ্ঞানপ্রাপ্তি)

2. Knowledge Concepts (জ্ঞানধারণা)

3. Creation of Knowledge (জ্ঞান সৃষ্টিকরণ)

4. Knowledge Application (জ্ঞান প্রয়োগ)

5. Knowledge Services (জ্ঞানভিত্তিক পরিষেবা)

এই মডেল নির্দেশ করে যে, শুধু জ্ঞান অর্জন করলেই হবে না — সেই জ্ঞানকে সৃষ্টিকরণ, প্রয়োগ ও সমাজে পরিষেবা হিসেবে রূপান্তর করাও জরুরি।


NKC-র লক্ষ্য ও সুপারিশসমূহ

A. সাম্য ও সুযোগ বৃদ্ধি: সকল নাগরিকের জন্য জ্ঞানপ্রাপ্তি সহজ ও সমানভাবে নিশ্চিত করতে হবে।

B. শিক্ষা ও গবেষণা শক্তিশালীকরণ: উচ্চশিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মান উন্নয়ন।

C. ICT ও ডিজিটাল প্রযুক্তি: শিক্ষা ও জ্ঞানে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে—শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও সংস্থা-সহকারে।

D. ভাষা, অনুবাদ ও স্থানীয় ভাষায় জ্ঞান প্রসার: ইংরেজি সহ স্থানীয় ভাষায় জ্ঞান উপাদান তৈরি ও প্রবাহ বাড়াতে হবে। 

E. বৃত্তিমূলক ও প্রয়োগভিত্তিক শিক্ষা: শুধু তাত্ত্বিক নয়, বাস্তবজীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দক্ষতা ও শিক্ষাকে কুর্নিশ দেওয়া।

F. প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্বিন্যাস ও জবাবদিহিতা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, লাইব্রেরি, অনলাইন রিসোর্স, জ্ঞানভিত্তিক নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে।


প্রধান ক্ষেত্র ও সুপারিশের 

A. বিদ্যালয় শিক্ষায় নজর দেওয়া হয়েছে—মুলত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে।

B. উচ্চশিক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থাগুলোর অবস্থা শক্তিশালী করার প্রস্তাব।

C. লাইব্রেরি, অনলাইন রিসোর্স, ই-গভর্নেন্স এবং জ্ঞানভিত্তিক নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি।

C. অনুবাদ ও ভাষাগত জ্ঞানের প্রসার: NKC-র সুপারিশে National Translation Mission শুরু হয়েছে। 

D. জ্ঞানভিত্তিক সামাজিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি: শুধু শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি নয়, শিক্ষার গুণমান ও প্রয়োগ খেয়াল রাখা।


প্রভাব ও উত্তরাধিকার

A. NKC-র সুপারিশ অনেক পরবর্তী নীতিতে (যেমন National Education Policy 2020) প্রতিফলিত হয়। 

B. শিক্ষাব্যবস্থায় “জ্ঞান-সমাজ” (knowledge society) ধারণা আগ্রাসীভাবে প্রবেশ করেছে।

C. যদিও সব সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি, তথাপি এটি ভারতীয় শিক্ষানীতিতে দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তনের সূচনা করেছে।

D. দীর্ঘমেয়াদে: বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থাগুলোর সংস্কার-দিক সামনে আসে।


 সীমাবদ্ধতা

বাজেট ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা।

রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে সমন্বয় সম্পূর্ণ হয়নি।

বিদ্যালয়-উচ্চশিক্ষায় গুণগত পরিবর্তন দ্রুত হয়নি।

প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রয়োগ সর্বত্র সমান হয়নি।


পরিশেষে বলা যায় যে   National Knowledge Commission (NKC) ছিল ভারতের জ্ঞান-নির্ভর উন্নয়ন দর্শনের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ২১শ শতকের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে দক্ষ মানবসম্পদ এবং প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন অপরিহার্য—NKC এই বাস্তবতাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে শিক্ষা, গবেষণা, তথ্য-প্রযুক্তি, ভাষা উন্নয়ন, উদ্ভাবন, গ্রন্থাগার সংস্কার এবং ই-গভর্নেন্সের মতো ক্ষেত্রসমূহে রূপান্তরমূলক সুপারিশ প্রদান করে।কমিশনের সুপারিশে জ্ঞানপ্রাপ্তির গণতন্ত্রীকরণ, শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত উন্নয়ন, বিশ্বমানের গবেষণা সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা এবং ICT-ভিত্তিক ভবিষ্যৎমুখী শিক্ষাব্যবস্থার নির্মাণের পথ উন্মুক্ত হয়। বিশেষত, Right to Education Act (2009) বাস্তবায়ন ও প্রযুক্তি-বিপ্লবকে সাধারণ মানুষের নাগালে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে NKC-র ভূমিকা ছিল অনন্য।

সুতরাং বলা যায়—NKC ভারতকে “Knowledge Society” হিসেবে পুনর্গঠনের লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং জাতীয় উন্নয়নে জ্ঞানকে সর্বশক্তিমান সম্পদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ভারতের অগ্রগতিকে আরও শক্তিশালী করতে পারে—NKC সেই ভিত্তিকে স্থায়ী ও সুদৃঢ়ভাবে নির্মাণ করেছে।

Comments

Popular posts from this blog

National Education Policy (2020)

Charter Act of 1813 and Its Educational Implication.

National Policy on Education (1968)