National Policy on Education (1968)
জাতীয় শিক্ষানীতি ১৯৬৮
প্রস্তাবনা
স্বাধীনতার পর ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থা উপনিবেশিক ধ্যানধারণার প্রভাবে আবদ্ধ ছিল। আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও বৈজ্ঞানিক সমাজ গঠনের জন্য শিক্ষাকে নতুন করে সংগঠিত করার প্রয়োজন দেখা দেয়। ১৯৬৪-৬৬ সালের কোঠারি কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ভারত সরকার ১৯৬৮ সালে প্রথম জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষণা করে। এই নীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল “শিক্ষাকে জাতীয় উন্নয়নের চালিকাশক্তি রূপে প্রতিষ্ঠা করা।”
মূল লক্ষ্য
1.সর্বজনীন শিক্ষা বিস্তার
2.জাতীয় সংহতি ও একতা
3.মানসম্মত শিক্ষার নিশ্চয়তা
4.বৈজ্ঞানিক মনোভাব ও গবেষণার বিকাশ
5.অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা
নীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য
1.সর্বজনীন ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত সকল শিশুর জন্য বিনামূল্যে ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত,বিদ্যালয় পরিকাঠামো ও শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধির নির্দেশ
2.তিন-ভাষা সূত্র (Three Language Formula) মাতৃভাষা/আঞ্চলিক ভাষা,হিন্দি,ইংরেজি
ভাষাগত বৈচিত্র্য রক্ষা + জাতীয় ঐক্য জোরদার
3.হিন্দিকে রাজ্য ভাষা হিসেবে বিকাশ দেশব্যাপী যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে হিন্দি প্রচার,অন্য ভাষার প্রতি সমান সম্মান
4.বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় জোর আধুনিক জ্ঞান, গবেষণা ও শিল্পোন্নয়নের সাথে শিক্ষা সংযুক্ত করা,বিজ্ঞানমনস্কতা ও বিশ্লেষণী চিন্তার বিকাশ
5.মূল্যবোধ শিক্ষা জাতীয় নৈতিকতা, মানবিকতা, সামাজিক দায়িত্ববোধের উন্নয়ন, চরিত্র গঠনমূলক শিক্ষার প্রসার
6. শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও মর্যাদা বৃদ্ধি শিক্ষকদের বেতন, প্রশিক্ষণ ও সমাজে অবস্থান উন্নত করা ,Teacher-Pupil Ratio উন্নত করার নির্দেশ
7.প্রাথমিক স্তরে মাতৃভাষা শিশুর জ্ঞানার্জনে ভাষাগত স্বচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করা
8. শিক্ষার সমতা ও ন্যায় মেয়ে, দলিত, আদিবাসী, পিছিয়ে পড়া শ্রেণির শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব ,Scholarship, Hostel ও বিশেষ প্রণোদনা প্রদান
9.দূরশিক্ষা ব্যবস্থা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মিডিয়ার মাধ্যমে শিক্ষা বিস্তার
কমিশনের সুপারিশ ও ১৯৬৮ নীতির সংযোগ
কোঠারি কমিশনের প্রস্তাবনা NPE 1968 এ প্রতিফল
a.সর্বজনীন ও সমান শিক্ষা বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষা
b.মানসম্মত শিক্ষা বিজ্ঞান শিক্ষা ও শিক্ষক প্রশিক্ষণে গুরুত্ব
c.জাতীয় ভাষা উন্নয়ন তিন-ভাষা সূত্র
d.সামাজিক ন্যায় ও সুযোগ SC/ST/OBC শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব
শিক্ষানীতির তাৎপর্য/উপলব্ধি
a.ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার প্রথম সমন্বিত ভিত্তি
b.শিক্ষা = জাতীয় উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার
c.বিদ্যালয় সংখ্যা বৃদ্ধি ও ভর্তি হার উন্নত
d.বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসারে সহায়ক ভূমিকা
সীমাবদ্ধতা
a.বাস্তবায়নে দুর্বলতা
b.আর্থিক ঘাটতি
c.তিন-ভাষা সূত্র সব রাজ্যে সম্পূর্ণ কার্যকর হয়নি
d.শিক্ষার মান বৈষম্য অব্যাহত
সারসংক্ষেপ (Conclusion) “জাতীয় শিক্ষানীতি ১৯৬৮” ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার বিকাশ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার এক ভিত্তিপ্রস্তর। যদিও বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা ছিল, তবুও এই নীতি ভারতের শিক্ষা ইতিহাসে দিক-নির্দেশক ও যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে।
Comments
Post a Comment