কোঠারি কমিশন(1964 -66)
ভূমিকা [Introduction]
পরাধীন ভারতে ঔপনিবেশিক শিক্ষায় যে বৈষম্যমূলক, নিম্নমানের কাঠামো গড়ে উঠেছিল, সেই কাঠামো ভেঙে নতুন করে গড়ার আহবান জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ জানালেও পরাধীনতার নাগপাশে বন্দি ভারতে তা সম্ভব হয়নি। তাই স্বাধীনতা লাভের পর জাতীয় সরকারের উদ্যোগে 1948 খ্রিস্টাব্দে ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ-এর সভাপতিত্বে প্রথম যে শিক্ষা কমিশন গঠিত হয় তা ছিল প্রধানত উচ্চশিক্ষা কেন্দ্রীয় কমিশন।এরপর 1952 খ্রিস্টাব্দে ড. লক্ষ্মণস্বামী মুদালিয়ারের সভাপতিত্বে যে দ্বিতীয় শিক্ষা কমিশন গঠিত হয় তা ছিল মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রিক কমিশন, তাই একে মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনও বলা হয়। ওই দুই কমিশনের সুপারিশগুলি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত না হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। তদানীন্তন জাতীয় সরকারের নেতৃবৃন্দ উপলব্ধি করেছিলেন যে, পূর্বোক্ত কমিশনগুলির রিপোর্ট শিক্ষার সামগ্রিক রূপবিন্যাসে অসম্পূর্ণ, রিপোর্টগুলি এক-একটি স্তরের রূপবিন্যাস মাত্র। ফলে সামগ্রিকভাবে ভারতের দিয়েছিল আদর্শের সংকট এবং সুস্থ মূল্যবোধের অভাব। সুতরাং, শিক্ষার পুনর্বিন্যাস আশু প্রয়োজন। তাই তদানীন্তন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী এম. সি. চাগলার উদ্যোগে University Grants Commission-এর চেয়ারম্যান ড. ডি. এস. কোঠারি-র (Dr. Daulat Singh Khothari) সভাপতিত্বে 1964 খ্রিস্টাব্দের 14 জুলাই ভারতীয় শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। এতে দেশ ও বিদেশ মিলে মোট বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের সংখ্যা ছিল 17 জন। ওই কমিটি 1966 খ্রিস্টাব্দের জুন মাসের শেষে তাঁদের রিপোর্ট 'Education and National Development' জমা দেন। কমিশনের সভাপতি ড. ডি. এস. কোঠারির নাম অনুসারে একে 'কোঠারি কমিশন' বলা হয়। এই কমিশনের ভারতীয় এবং বিদেশি শিক্ষাবিদগণ হলেন-
মোট সদস্যঃ ১৭ জন
ভারতীয় ১০ জন
বিদেশি ৭ জন (আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ)
ভারতের প্রধান সদস্যবৃন্দ
ভূমিকা নাম
সভাপতি ড. ডি. এস. কোঠারি
সদস্য জে. পি. নায়ক
সদস্য ড. কে. জি. সায়েদীন
সদস্য ড. টি. সেন
সদস্য কুমারী এস. পানাডিকার
সদস্য অধ্যাপক এম. ভি. মাথুর
সদস্য আর. এ. গোপালস্বামী
সদস্য ড. বি. পি. পল
সদস্য এ. আর. দায়দ
সচিব ড. পি. এন. কিরপাল
রিপোর্ট প্রকাশকমিশন ১৯৬৬ সালের জুন মাসে তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট “Education and National Development”ভারত সরকারের নিকট জমা দেয়।এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই পরে জাতীয় শিক্ষা নীতি (১৯৬৮) প্রণয়ন করা হয়।
কোঠারি কমিশনের গঠন(Structure of Kothari Commission)
সুসংগঠিত করতে কমিশন গঠন করেছিল —Working Group 7 টি ,Task Force12 টি
Working Group এটি ছিল একটি প্রধান সমন্বয়কারী দল, যারা সমস্ত Task Force-এর উপর তত্ত্বাবধান করত এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রধান নীতি-সংস্কারের দিক নির্ধারণ করত।
Working Group মূলত নিচের প্রধান ক্ষেত্রগুলোকে গুরুত্ব দেয় —
A. প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা
B. স্কুলের পরিকাঠামো ও ভবন নির্মাণ
C. পাঠ্যক্রম নির্মাণ
D. শিক্ষা পরিসংখ্যান ও তথ্য সংগ্রহ
E. নারীশিক্ষা
F. সামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকা শ্রেণির শিক্ষা
G. বিদ্যালয় ও সমাজের পারস্পরিক সম্পর্ক
Task Force (১২টি বিশেষায়িত দল)
প্রতিটি Task Force নির্দিষ্ট শিক্ষাক্ষেত্রে গবেষণা ও নীতি-প্রস্তাব তৈরি করে।
1 Student Welfare শিক্ষার্থীদের কল্যাণমূলক ব্যবস্থা
2 Science & Research বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা প্রসার
3 Man Power মানবসম্পদ উন্নয়ন
4 Technical Education কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণ
5 Agricultural Education কৃষিশিক্ষা শক্তিশালীকরণ
6 Educational Administration শিক্ষা প্রশাসন ও নীতি বাস্তবায়ন
7 School Education বিদ্যালয় স্তরের কাঠামো ও গুণমান বৃদ্ধি
8 Adult Education প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষা ও নিরক্ষরতা দূর
9 Higher Education উচ্চশিক্ষার গুণগত মান
10 Economics of Education শিক্ষার অর্থায়ন ও ব্যয়বিন্যাস
11 Teacher Education শিক্ষক প্রশিক্ষণ
12 Teacher’s Status & New Learning Methods শিক্ষকের মর্যাদা, বেতন, নতুন শিক্ষণ কৌশল
শিক্ষার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য (Aims and Objectives of Education)
ভারতীয় শিক্ষা কমিশন বা কোঠারি কমিশন তাদের দীর্ঘ সুপারিশের প্রথমেই ভারতীয় শিক্ষার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য (Aims and Objectives) কী হবে তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছে। শিক্ষা ও জাতীয় উদ্দেশ্যাবলি Education and National Objectives) এই শিরোনামে কমিশন জাতীয় শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কে বেশ কয়েকটি দিকের প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কমিশন বলেছে শিক্ষার লক্ষ্য হবেー
1. চরিত্রের বিকাশ সাধন: চরিত্র গঠন করাকেই শিক্ষার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য বলে মনে করেছে কোঠারি কমিশন। কমিশন বলেছে, ভারত একটি গণতান্ত্রিক (Democratic) এবং জনকল্যাণকামী রাষ্ট্র (Welfare State)। সুতরাং, যদি এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে মজবুত করতে হয়, গণতন্ত্রের সুফলকে সকলের মধ্যে পৌঁছে দিতে হয় তাহলে অবশ্যই শিশুদের চারিত্রিক বিকাশের দিকে লক্ষ রাখতে হবে, যা শিক্ষার একটি অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
2. জাতীয় চেতনাবোধ জাগ্রত করা: জাতীয় চেতনাবোধ (National Consciousness) জাতীয় সংহতিবোধ (National Integration) জাগ্রত করা শিক্ষার একটি বড়ো উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। কমিশনের মতে ভারতে যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো (Federal Structure) প্রবর্তিত হয়েছে, সেহেতু এই যুক্তরাস্ট্রীয় চরিত্রকে ধরে রাখতে গেলে জনগণের মধ্যে জাতীয় ঐক্যবোধ গড়ে তুলতে হবে।
3. গণতান্ত্রিক চেতনাবোধ জাগ্রত করা: গণতন্ত্র একটি মহান আদর্শ। এই আদর্শকে যদি দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে হয় তাহলে গণতান্ত্রিক চেতনাকে শৈশবকাল থেকেই জাগিয়ে তুলতে হবে। প্রথম থেকেই গণতান্ত্রিক রীতিনীতির প্রতি যদি শ্রদ্ধাবোধ বাড়িয়ে দেওয়া যায় তাহলে সারাজীবন ধরেই শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক ধ্যানধারণার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে।
4. জাতীয় উৎপাদনমুখী শিক্ষা: কোঠারি কমিশন সব সময়ই উৎপাদনমুখী শিক্ষার ওপর সবচাইতে বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছে। শিক্ষাকে এমনভাবে পরিচালিত করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শ্রমের প্রতি মর্যাদাবোধ বাড়ে এবং কাজের প্রতি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ বাড়ে। শিক্ষাকে যদি জাতীয় উৎপাদনমুখী করা যায় তাহলে দেশের জাতীয় আয় বাড়বে এবং দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ঘটবে। এককথায় শিক্ষাকে উৎপাদনমুখী করে গড়ে তুলতে হবে।
5. জাতীয় সংহতি জাগ্রত করা: ভারত একটি বৈচিত্র্যময় দেশ। নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান এখানে রয়েছে। ভারতের একটি প্রদেশের সঙ্গে অন্য প্রদেশের ভাষাগত, ধর্মগত, কৃষ্টিগত, সংস্কৃতিগত ব্যাপক ব্যবধান রয়েছে। এত ব্যবধান বা বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও ভারতের প্রতিটি মানুষের একটি বড়ো পরিচয় হল তিনি ভারতীয়। এটিই হল জাতীয় সংহতিবোধ (The Sense of National Integration)। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই জাতীয় সংহতিবোধ যত দৃঢ় হবে, দেশের ঐক্য এবং সংহতিও তত মজবুত হবে।
6. ভাষার বিকাশসাধন করা: প্রতিটি মানুষের ভাষার বিকাশ সাধন করা শিক্ষার একটি বড়ো উদ্দেশ্য।ভাষার বিকাশের মধ্য দিয়েই মানুষ তার মনের ভাবকে দ্রুত অন্যের কাছে পৌঁছে দিতে পারে। তাই শিক্ষার একটি বড়ো লক্ষ্য হবে প্রতিটি শিশুর যাতে ভাষার বিকাশ যথাযথভাবে ঘটে সেদিকে লক্ষ রাখা। ভারত যেহেতু একটি বহুভাষিক রাষ্ট্র, সেহেতু যথাযথভাবে যদি ভাষার বিকাশ না ঘটে তাহলে এক প্রদেশের মানুষ অন্য প্রদেশের মানুষের সঙ্গে ভাবের আদানপ্রদান করতে পারবে না। তাই ভাষাগত দক্ষতা বা পারস্পরিক সংযোগ স্থাপনের ক্ষমতা (Communication Skill) বাড়ানো উচিত।
7. সামাজিক পরিবর্তনে সাহায্য করা: শিক্ষার একটি বড়ো উদ্দেশ্য হল ব্যক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গেসমাজেরও বিকাশ সাধন করা। সমাজের বিকাশ বলতে বোঝায় সামাজিক উন্নয়ন এবং সামাজিক পরিবর্তন (Social Changes)। সমাজের পরিবর্তন বলতে অবশ্যই ইতিবাচক পরিবর্তনকে বোঝায়, যে পরিবর্তন সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের মঙ্গল সাধন করে।
৪. নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা: নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ (Ethical and Spiritual Values) আমাদের ভারতীয় সমাজজীবনের পরম্পরা (Tradition)। ভারতীয় কৃষ্টি, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে যদি বিকশিত করতে হয় তাহলে সকলের নৈতিকতা এবং আধ্যাত্মিক চেতনাকে জাগ্রত করতে হবে, যা পরধর্মসহিষ্ণুতার মতো মূল্যবোধগুলিকে বিকশিত করতে পারে।সেই জন্যই কমিশন বলেছে যে, ভারতীয় শিক্ষার একটি প্রধান উদ্দেশ্য হল নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করা।
সুতরাং, ভারতীয় শিক্ষা কমিশন বর্ণিত শিক্ষার লক্ষ্যগুলিকে যদি গভীরভাবে বিশ্লেষণ এবং মূল্যায়ন করা যায় তাহলে বলা যায় যে, ভারতীয় সংস্কৃতি, ভারতীয় পরম্পরা এবং ভারতীয় সমাজজীবনের প্রয়োজনীয় দিকগুলিকে সামনে রেখে কমিশন শিক্ষার লক্ষ্যগুলিকে শির করেছে। কোঠারি কমিশনের শিক্ষাসংক্রান্ত বিশেষ একটি নির্দেশ হল উৎপাদনমুখী শিক্ষা (Productive Education) যা ভারতীয় জাতীয় শিক্ষানীতিতে বারে বারে গৃহীত হয়েছে।
কোঠারি কমিশন, (1964-'66) এবং ভারতে শিক্ষার বর্তমান পদ্ধতি
কোঠারি কমিশন, (1964-66)-এর রিপোর্টের প্রেক্ষাপটে ভারতে শিক্ষার বর্তমান চিত্র নিম্নরূপ-
কোঠারি কমিশনের রিপোর্টে সমস্ত ভারতে 10+2+3 শিক্ষার কাঠামো প্রচলনের জন্য যে সুপারিশ করা হয়েছিল তা কালের বিবর্তন পথে কখনও কিছুটা ধরা, আবার কখনও কিছুটা ছাড়া হয়েছে। কমিশনের রিপোর্টে 10 বছরের মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের পর যে দু-বছরের উচ্চতর মাধ্যমিক স্তরের (Higher Secondary Stage) কথা উল্লেখ আছে, তার অন্তর্ভুক্ত আছে XI এবং XII শ্রেণি। এখানে আছে সাধারণধর্মী শিক্ষা (General Education) এবং বৃত্তিমুখী শিক্ষা (Vocational Education)। কমিশনের সুচিন্তিত সুপারিশ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মূল্যবোধের স্ফুরণ ঘটাতে, আত্মবিশ্বাস জাগাতে, কল্যাণকর জীবনদর্শন গড়তে সক্ষম বলে, বর্তমানে কমিশন নির্ধারিত পাঠ্যক্রম XI এবং XII শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তবে কোঠারি কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, নিম্ন মাধ্যমিক স্তর (Lower Secondary Stage) যার অন্তর্ভুক্ত আছে (VIII, IX, X) বা (IX, X), সমাপ্তির পর 40% শিক্ষার্থী কর্মজীবনে ঢুকবে, 30% শিক্ষার্থী বৃত্তিমূলক শিক্ষার পাঠ্যক্রম অনুসরণ করবে, অবশিষ্ট 30% উচ্চশিক্ষা সাধারণধর্মী পাঠ্যক্রমে পড়াশোনা করবে।
কিন্তু বর্তমানে গ্রামীণ জীবনে শিক্ষার্থীদের রুচি, রীতিনীতি, আচার-আচরণ, মূল্যবোধ প্রভৃতির পরিবর্তন ঘটায় মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল এবং পরবর্তী স্তরের পঠনপাঠনের বিন্যাস কমিশনের সুপারিশকে যথাযথভাবে অনুসরণ করে না।
আবার কমিশনের রিপোর্ট অনুসারে পশ্চিমবঙ্গে 1976 খ্রিস্টাব্দ থেকে 2 স্তরের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা (Higher Secondary Education) এবং তিন বছরের স্নাতক স্তরের শিক্ষা চালু হলেও তা ধরে রাখা যায়নি। 1988-1989 খ্রিস্টাব্দে শিক্ষাবর্ষ থেকে দু-বছরের পাস কোর্স এবং তিন বছরের অনার্স কোর্স চালু হয় যা কোঠারি কমিশনের রিপোর্টকে অনুসরণ করে না। তবে এই শিক্ষা পদ্ধতির বিলুপ্তি ঘটে। University Grant Commission, (U.G.C.) নির্দেশ দেন যে, ভারতবর্ষের সকল কলেজে স্নাতক স্তরের শিক্ষাকালের ব্যাপ্তি হবে তিন বছর। এই নির্দেশ অনুযায়ী, কোঠারি কমিশনের সুপারিশকে অনুসরণ করে স্নাতকস্তরে পাস ও অনার্স কোর্সের স্বায়িত্বকাল তিন বছর করা হয়েছে। যে চিন্তাধারা, বা স্বপ্ন নিয়ে কোঠারি কমিশন কাঠামো তৈরি করেছিলেন, তার উপযোগিতা আমরা সকলে উপলব্ধি করতে পেরেছি, এটাই সুখের বিষয়।
প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা(Pre-Primary Education)
ভূমিকা (Introduction):
বর্তমানে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা (Pre-Primary Education), প্রথাগত শিক্ষার (Formal Education) প্রথম স্তর। কারণ আজ শিক্ষাবিদগণ স্বীকার করেছেন যে, প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণের আগে অর্থাৎ পাঁচ বছর বয়সের পূর্বে শিশুরা পিতা-মাতা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হাত ধরে বা কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে যে শিক্ষালাভ করে থাকে, তাকে অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা (Informal Education) বলা বাঞ্ছনীয় নয়। এই শিক্ষা হল নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা (Formal Education); এই শিক্ষা হল প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষাPre-Primary Education)। শিশুর আধো-আধো বুলি দিয়ে যে শিক্ষা আরম্ভ, সেই শিক্ষা মানসিক শক্তি বৃদ্ধির সহায়ক, সেই শিক্ষাই জীবন-ভিত রচনার অন্যতম হাতিয়ার: সুতরাং এই শিক্ষার মূল্য অসীম।ভরতি হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে বলে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কোঠারি কমিশনের (1964-প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা : দুই বা আড়াই বছর বয়স থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত অর্থাৎ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৪) রিপোর্টে বলা হয়েছে, "Pre-Primary Education is of great significance to the physical, factory home back grounds." অর্থাৎ, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, শিশুদের দৈহিক প্রাক্ষোভিক এবং বৌচ্চিত emotional and intellectual development of the children especially those with unsatis বিকাশে বিরাট তাৎপর্যপূর্ণ অবস্থানে আছে, বিশেষত যারা অসন্তোষজনক গৃহ পরিমণ্ডলে থাকে।
প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যাবলি
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যগুলি হল-
1. দৈহিক বিকাশ: প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল দৈহিক বিকাশ। সুস্থ-সবল দেহই সুস্থ-সবল মনের অধিকারী হতে পারে। তাই প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল দূষণ (Pollution) ব্যাপ্ত পৃথিবীর জল, বায়ু, মাটিতে দৈহিক বিকাশে গুরুত্ব আরোপ করা।
2. মানসিক বিকাশ: বিকাশের স্তর হিসেবে শিশুর মানসিক বিকাশের স্তর হল অতি গুরুত্বপূর্ণ। এই স্তরে শিশুর মধ্যে কৌতূহল (Curiosity), অনুসন্ধানের (Exploration) ইচ্ছা প্রভৃতি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, সেগুলি যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে ওদের মানসিক বিকাশের পথ সুগম করা হয়।
3. প্রাক্ষোভিক বিকাশ: প্রাক্ষোভিক বিকাশের স্তরে শিশুর মধ্যে ক্রোধ (Anger), ভয় (Fear), উল্লাস (Elation) প্রভৃতি প্রক্ষোভগুলির যথার্থ বিকাশ লক্ষ করা যায়। তা ছাড়া শৈশবে কিছু কিছু অসংযত অনভিপ্রেত প্রক্ষোভ যেমন-ঘৃণা (Heat), ঈর্ষা (Envy) প্রভৃতি দেখা যায় সেগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করাও প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য।
4. সামাজিক বিকাশ: আজকের শিশুকে ভবিষ্যতে হতে হবে কোমলে-কঠিনে, বিষাদে-হরষে গড়া সমাজ জীবনের অংশীদার। সমাজের আঙিনায় তাকে সারাটা জীবন অতিবাহিত করতে হবে। তাই শিশুর ময়ে সমাজ সচেতনতা তৈরি হওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল সংকীর্ণতা কাটিয়ে তর মধ্যে সামাজিক গুণাবলি-সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও সহানুভূতি প্রভৃতির বিকাশ ঘটানো।
5. কৌতূহল নিবৃত্তি: কৌতূহল নিবৃত্তির মাধ্যমে আসে বিকাশ। অতীতে অজানাকে জানার জন মানুষের কৌতূহলের অন্ত ছিল না। সেই কৌতূহল নিরসনের পথে দেখা দেয় নব নব সৃষ্টি, হার সৃষ্টির আনন্দে মাতোয়ারা হয় মানুষ। তাই প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল কৌতূহল নিবৃত্তির শর প্রশস্ত করা।
. ভাষার বিকাশ: প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল ভাষার বিকাশ ঘটানো। ভাষা বিকাশের অপ্রতুলতায় বৌদ্ধিক বিকাশ ব্যাহত হয়। প্রাক্-প্রাথমিক স্তর ভাষা বিকাশের স্তর। তাই যথাযথ পরিচালনার মাধ্যমে শিশুর মধ্যে ভাষার যথার্থ বিকাশ ঘটানোই হল প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।
6. নান্দনিক বিকাশ: শিশুর মধ্যে যাতে সৌন্দর্য চেতনার বিকাশ ঘটে সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া বাঞ্ছনীয়। সুন্দরের প্রতি আকর্ষণ, সুন্দরের প্রতি ভালোবাসা ঘটায় চারিত্রিক বিকাশ। তাই প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল নান্দনিক বিকাশ (Aesthetic development) |
7. আত্মপ্রকাশ ঘটানো: শিশু কিছু বিশেষ মানসিক ক্ষমতা (Special Mental Ability) নিয়েই ভূমিষ্ঠ হয়। জন্মসূত্রে প্রাপ্ত ওই বিশেষ মানসিক ক্ষমতা যা সুপ্ত অবস্থায় শিশুর মধ্যে থাকে তার বিকাশসাধনে সচেষ্ট হওয়া উচিত। তাই প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল শিশুর মধ্যে নিহিত সম্ভাবনার আত্মপ্রকাশে সহায়তা করা।
৪. সু-অভ্যাস গঠনে সহায়তা: প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল সু-অভ্যাস গঠনের সুপ্রভাব বর্তমান তথা ভবিষ্যৎ জীবনকে প্রভাবিত করে। তাই সকালে ওঠা, হাত মুখ ধোয়া, নিয়মিত পড়াশোনা, শরীরচর্চা করা, নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাওয়া, নখ কাটা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা প্রভৃতি সু-অভ্যাস গঠনে সহায়তা করা একান্তই বাঞ্ছনীয়।
9. দেশপ্রেমের জাগরণ: আজকের শিশু ভবিষ্যতের নাগরিক। তাই শৈশবেই দেশ প্রেমের বীজ শিশুর মধ্যে বপন করতে হবে। তাহলে ভবিষ্যতে ওই বীজ মহীরুহে পরিণত হবে। যে দেশে জন্ম, যে দেশের জলবায়ু অন্নবস্ত্রে শিশুর বৃদ্ধি (Growth) ও বিকাশ (Development), সে দেশের প্রতি শিশুর কর্তব্যবোধ জাগানো, এই বোধের বিকাশ ঘটানো প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য।
প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রম (Curriculum of Pre-Primary Education)
1.দৈহিক বিকাশ: শৈশবে শিশুর দৈহিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটলে ভবিষ্যৎ জীবনে তার কুপ্রভাব পড়ে, দৈহিক অস্বাচ্ছন্দ্যতা পরে অনেক স্বপ্নভঙ্গের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দৈহিক বৃদ্ধি (Growth) এবং বিকাশের (Development) ওপর মানসিক বিকাশ নির্ভরশীল। তাই এদের পাঠ্যক্রমে থাকে নানা ধরনের খেলা, ব্যায়াম, আসন, ব্রতচারী প্রভৃতি।
2. প্রাকৃতিক পরিবেশ পরিচিতিঃ সুখে-দুঃখে যে পরিবেশের মধ্যে সারাটা জীবন অতিবাহিত করতে হয়, সেই পরিবেশের সঙ্গে যথার্থ অভিযোজনে জীবন ফলপ্রসূ হয়। তাই প্রাকৃতিক পরিবেশের আঙিনায় থাকা নদী, খালবিল, পশুপাখি, গাছপালা প্রভৃতি পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত থাকে। শিশুদের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণে নিয়ে গিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে অন্তরের যোগসূত্র রচনা করা হয়।
3. সৃজনাত্মক কার্যাবলি : শিশুর মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনার সঞ্চার ঘটাতে, কৌতূহল বৃদ্ধি করতে সৃজনাত্মক কার্যাবলি প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রমে থাকে। যেমন-অঙ্কন করা, গান করা, ছবি কাটা, ছবি লাগানো ও খেলনা তৈরি করা প্রভৃতি।
4. ভাষার বিকাশ: প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষায় পাঠ্যক্রমে ভাষার বিকাশের ওপর দৃষ্টি দেওয়া হয়। ভাষার বিকাশই মনের মাধুর্য বাড়ায়, জ্ঞানার্জনের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। তাই ভাষার বিকাশের জন্য নানা বিষয়ের নানান গল্প, আবৃত্তি, অভিনয় প্রভৃতি পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত থাকে।
5. হিসাব বিষয়ক কার্যাবলি: শৈশবে শিশুর মধ্যে ভাষাগত বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে হিসেব সংক্রান্ত দিক সচেতনতা আনয়নের জন্য শিশুর উপযোগী নানা উপকরণ যেমন-কাচের ছোটো ছোটো গুলি, তেঁতুলের বীজ, আঙুল গণনা প্রভৃতির সহায়তা নেওয়া হয়।
6.সু-অভ্যাস গঠনের কার্যাবলি : শৈশবে শিশুর মধ্যে যাতে সু-অভ্যাস গঠিত হয় সেজন্য প্রাক্-প্রাথমিক পাঠ্যক্রমে বিভিন্ন বিষয় যুক্ত থাকে যেমন-সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা, নখ কাটা, পরিষ্কার জামাকাপড় পরা প্রভৃতি।
প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠানসমূহ
Case / Crèche
০–২ বছর বয়সী শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচর্যা ও নিরাপত্তার জন্য পরিচালিত প্রাক-প্রাথমিক প্রতিষ্ঠানে Case বা Crèche বলা হয়।
Kindergarten
ফ্রয়েবেলের প্রবর্তিত খেলা-ভিত্তিক ও শিশুদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের লক্ষ্যে নির্মিত প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়কে Kindergarten বলা হয়।
Montessori School
মাদাম মন্তেসরি-র প্রতিষ্ঠিত, ইন্দ্রিয়ভিত্তিক ও শিশু-স্বাধীনতার ওপর গুরুত্বারোপকারী প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাপদ্ধতিকে Montessori বলা হয়।
Nursery School
৩–৬ বছর বয়সী শিশুদের স্বাস্থ্য, সামাজিকীকরণ ও খেলা-ভিত্তিক শিক্ষার জন্য স্থাপিত প্রতিষ্ঠানকে Nursery School বলা হয়।
Pre-Basic School
গান্ধিজির প্রবর্তিত, শ্রমভিত্তিক ও জীবনমুখী প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাপদ্ধতিকে Pre-Basic School বলা হয়।
প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার কাঠামো (Structure of Pre-Primary Education)
আমাদের ভারতে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার কোনো সুনির্দিষ্ট কাঠামো নেই। রাজ্য সরকার বা কেন্দ্রীয় সরকার প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ না করায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রাক্-প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি পরিচালিত হয়। সরকার নিয়ন্ত্রিত নয় বলে প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে যথেষ্ট বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন-ক্লেস হল প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার প্রথম প্রতিষ্ঠান। দু-বছর পর্যন্ত শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এই ধরনের প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে।
পরবর্তী পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলি হল নার্সারি বিদ্যালয়, বুনিয়াদি বিদ্যালয় প্রভৃতি। আবার প্রাক্-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিবিন্যাস হল KG-I, KG-II ইত্যাদি। কোঠারি কমিশন (1964-'66) তাদের রিপোর্টে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার (Pre-Primary Education) কোনো সুনির্দিষ্ট কাঠামোর কথা উল্লেখ করেননি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, "The Primary stage will be preceded, wherever possible, by Pre-Primary education of one to there years." অর্থাৎ, প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষার পূর্বে হবে, যেখানে সম্ভব, এক থেকে তিন বছরের প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা সংগঠিত হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা(Primary Education)
ভূমিকা (Introduction): প্রাথমিক শিক্ষা (Primary Education) হল প্রথাগত শিক্ষার (Formal Education)-এর দ্বিতীয় স্তর। জীবন বিকাশের এই স্তরে শিশুদের মধ্যে সক্রিয়তা লক্ষ করা যায়। প্রাথমিক শিক্ষার সময়কাল সাধারণত 5 বা 6 বছর থেকে 11 বা 12 বছর বয়সকাল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে থাকে। এই সময় শিশুদের স্মৃতিশক্তি (Memory) খুব প্রখর থাকে, মনোযোগের পরিসর (Span of attention) উন্নত থাকে। সুতরাং, বৌদ্ধিক বিকাশ (Cognitive Development), সামাজিক বিকাশ (Social Development), প্রাক্ষোভিক বিকাশ (Emotional Development) প্রভৃতি নানা ধরনের জ্ঞানার্জন শিশুরা করে। সুতরাং, যে প্রাথমিক শিক্ষাস্তর জীবনের ভিত রচনা সাপেক্ষে পরবর্তী জীবন গঠনে শিশুকে সহায়তা করে, সেই প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া বাঞ্ছনীয়।
প্রাথমিক শিক্ষাঃ মানবজীবনের প্রথাগত শিক্ষার (Formal Education) দ্বিতীয় স্তর যা 5 বা ও বছর বয়স থেকে 11 বা 12 বছর বয়সকাল পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে এবং জীবন বিকাশের পথ প্রশস্ত করতে, জ্ঞানমূলক অভিজ্ঞতা অর্জনে শিশুকে সহায়তা করে, তাই হল প্রাথমিক শিক্ষা (Primary Education)।
প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যাবলি(Aims and Objectives of Primary Education)
প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যাবলি হল-
1. দৈহিক বিকাশ: সুস্থ-সবল দেহই শিশুর বৌদ্ধিক বিকাশসহ অন্যান্য বিকাশের পথ সুগম করে। আবার দৈহিক বিকাশের অভাবে ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। তাই প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিশুর দৈহিক বিকাশে সহায়তা করা।
2. বৌদ্ধিক বিকাশ: বৌদ্ধিক বিকাশের ফলে শিশুর মধ্যে চিন্তনের ক্ষমতা (Power of thinking), যুক্তিশক্তির ক্ষমতা (Power of reasoning), প্রত্যক্ষণের ক্ষমতা (Power of perception) প্রভৃতি বৃদ্ধি পায়, ফলে শিশু ভবিষ্যৎ জীবনে অতুল ঐশ্বর্যের অধিকারী হয়। তাই প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য হল বৌদ্ধিক বিকাশের ক্ষেত্রে শিশুকে সহায়তা করা।
3. সামাজিক বিকাশ: সমাজের মাঝে শিশুর জন্ম, সমাজের মাঝে বৃদ্ধি ও বিকাশ, সমাজের মাঝেই তো শিশুর বিচরণ ক্ষেত্র। তাই প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিশুকে সামাজিকীকরণে (Socializa-tion) সহায়তা করা।
4. বাচনিক বিকাশ: মনের ভাবকে সঠিকভাবে ব্যক্ত করতে হলে চাই বাচনিক বিকাশ। বাচনিক বিকাশ ব্যক্তিত্বের বিকাশের সহায়ক। তাই প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিশুকে বাচনিক বিকাশে সহায়তা করা।
5. কৃষ্টি ও সংস্কৃতির বিকাশ ভারতের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য প্রভৃতির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যোগ সাধন করা একান্ত প্রয়োজন। তাই প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল দেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য প্রভৃতির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যথাযথ পরিচয় ঘটিয়ে তাদের জ্ঞানের ক্ষুধা বৃদ্ধি করা এবং আদর্শ ভারতীয় তৈরি করা।
6. স্বাস্থ্য সচেতনতার বিকাশ: স্বাস্থ্যই সম্পদ। সেই সম্পদের অব্যশম্পা মানেই বৌদ্ধিক-
সামাজিক-প্রাক্ষোভিক প্রভৃতি বিকাশে অবহেলা করা। তাই প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল স্বাস্থ্য সচেনতার বিকাশে শিশুদের সহায়তা করা। যেমন-যেখানে সেখানে থুতু না ফেলা, দাঁত দিয়ে নখ না কাটা, রোজ দাঁত মাজা, থুতু দিয়ে বইয়ের পাতা না ওলটানো ইত্যাদি।
7. নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শক্তির বিকাশ: শিশুদের অন্তর্জগতের বিকাশের জন্য প্রাথমিক শিক্ষার আর-এক উদ্দেশ্য হল আধ্যাত্মিক চেতনায় ও নৈতিকতা বোধে শিশুদের উদ্বুদ্ধ করে আদর্শ চরিত্রের অধিকারী করে তোলা।
৪. সৌন্দর্যবোধের বিকাশ: সৌন্দর্যবোধের বিকাশে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্ফুরণ ঘটে; জ্ঞানের স্পৃহা বৃদ্ধি পায়। সুতরাং, প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল বিদ্যালয়কে নানাভাবে সাজিয়ে শিশুদের মধ্যে সৌন্দর্যবোধের বিকাশ ঘটানো।
9. আদর্শ নাগরিক গড়া: জনকল্যাণকামী রাষ্ট্র গড়তে হলে আদর্শ নাগরিকের প্রয়োজন। তাই প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিশুদের মধ্যে আদর্শ নাগরিকের নীতিবোধগুলি জাগ্রত করা।
10. সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ: শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছু প্রতিভা সুপ্ত অবস্থায় থাকে। প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল সেই সুপ্ত প্রতিভার বিকাশসাধন করে শিক্ষার্থীদের আদর্শ ব্যক্তিত্বের অধিকারী করে তোলা।
প্রাথমিক শিক্ষার কাঠামো (Structure of Primary Education)
শিক্ষা কমিশন (1964-66) প্রতিবেদনে বলেছে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের পর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হবে। অর্থাৎ, শিশু 6 বছর বয়সে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে প্রবেশ করবে এবং যার সময়কাল হবে 7-8 বছর। প্রাথমিক শিক্ষাকে দুটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে, যথা নিম্নপ্রাথমিক পর্যায় (Lower Primary Stage), এই পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত হবে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত। এর পর শুরু হবে উচ্চপ্রাথমিক পর্যায় (Higher Primary Stage)। এই পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত হবে পঞ্চম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত।
প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রম (Curriculum of Primary Education)
জীবন পথ পরিক্রমণের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলি একান্তই অপরিহার্য, যেমন মাতৃভাষার চর্চা, অঙ্ক, ইংরেজি, ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ের অনুশীলন, যেগুলি প্রাথমিক স্তরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উত্ত বিষয়গুলি চর্চার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানের ফলে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের স্ফুরণ ঘটে।
প্রথম শ্রেণির পাঠ্যক্রমে আছে খেলাধুলা ও শরীরচর্চামূলক বিষয়। শরীরচর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দেহ ও মনের বিকাশ ঘটে। বিশেষ করে, দেহ ও মনের সুসামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন জ্ঞানমূলক বিকাশের সহায়ক। আবার সুপ্ত প্রতিভার বিকাশসাধনের জন্য সৃজনাত্মক কার্যাবলি, ছবি আঁকা, মাটির কাজ প্রভৃতি প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রমে আনা হয়েছে। প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্তিতে আছে, বিভিন্ন উৎসব পালন, সমাজসেবা, শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা, প্রভৃতি, সেগুলি সম্পাদনের মাধ্যমে গড়ে ওঠে প্রকৃত জীবনাদর্শ।
প্রাথমিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠান (Institutions of Primary Education)
আমাদের দেশে যেসব সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলি হল-
1. সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি সম্পূর্ণ সরকার নিয়ন্ত্রিত বিদ্যালয়।
ওই সকল অবৈতনিক বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষকদের বেতনসহ অন্যান্য খরচ সরকার বহন করে থাকেন। ওই সকল বিদ্যালয়গুলিতে সরকারি পুস্তক বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হয়।
2. সরকার অনুমোদিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: সরকার অনুমোদিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে সরকার শিক্ষকদের বেতন এবং ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে পুস্তক দেন। এই সকল বিদ্যালয়গুলি সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন হলেও পরিচালন ব্যবস্থাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সরকারি বিদ্যালয়গুলি থেকে বহুলাংশে স্বতন্ত্র।
3. বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে সরকার আর্থিক সাহায্য না করায় বিদ্যালয়গুলি অবৈতনিক নয়। এখানে শিক্ষার্থীদের বেতন দিয়ে পড়তে হয়।
4. একক শিক্ষক পরিচালিত বিদ্যালয়: যে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজনমাত্র শিক্ষক কোনো বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বনে সমস্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করে থাকেন, সেই সকল বিদ্যালয়গুলিকে বলে একক শিক্ষক পরিচালিত বিদ্যালয়।
5. বুনিয়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয়: জাতির জনক মহাত্মা গান্ধি 1937 খ্রিস্টাব্দে বুনিয়াদি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা
করেন। বুনিয়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুবন্ধ পদ্ধতিতে (Correlation Method) শিক্ষা দেওয়া হয়। বুনিয়াদি শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের (All-round development) সঙ্গে সঙ্গে শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।
6. ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়: আমাদের ভারতবর্ষ হল বহু জাতি, বহু ধর্মাবলম্বী মানুষের বাসভূমি। প্রতি ধর্মের মানুষ তাঁদের ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এক শ্রেণির প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে থাকেন, সেখানে গতানুগতিক শিক্ষার পাশাপাশি তাঁদের নিজস্ব ধর্মের প্রচার করে থাকেন।
7. স্বায়ত্ত্বশাসন সংস্থা পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়: আমাদের ভারতে অনেক স্বায়ত্তশাসন সংস্থা আছে। যেমন-কর্পোরেশন বা মিউনিসিপ্যালিটি, যারা তাদের পরিচালনায় প্রাথমিক বিদ্যালয় চালায়।
৪. প্রথামুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়: প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থা ছাড়াও আমাদের দেশে প্রথামুক্ত বেশ কিছু
প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, যেখানে ইচ্ছানুসারে সময়সূচি ও পাঠ্যক্রম নির্বাচন করা হয়। এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল নৈশ বিদ্যালয় এবং বিভিন্ন ধরনের সাক্ষরতা কেন্দ্র।
প্রাথমিক শিক্ষার প্রধান সমস্যাবলি
প্রাথমিক শিক্ষা ভারতের প্রথাগত শিক্ষার দ্বিতীয় স্তর। সংবিধানের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সামাজিক-অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক নানা বাধায় এখনো প্রাথমিক শিক্ষার সর্বজনীন বিস্তার ঘটেনি। প্রধান সমস্যাগুলি হলো—
1.সামাজিক সমস্যা অন্ধবিশ্বাস, রক্ষণশীলতা, বিশেষ করে মেয়েশিশুর শিক্ষার প্রতি উদাসীনতা প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতিতে অন্তরায়।
2.আর্থিক সমস্যা দারিদ্র্যের কারণে শিশুদের শ্রমে নিয়োজিত হতে হয়, ফলে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি ও স্থায়িত্ব কমে যায়।
3. পরিকাঠামোগত সমস্যা বিদ্যালয় সংখ্যা কম, শ্রেণিকক্ষের অভাব, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও মৌলিক সুবিধার ঘাটতি।
4. শিক্ষক সংকট ও প্রশিক্ষণের অভাব প্রশিক্ষিত শিক্ষক অপ্রতুল, শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা ও মানোন্নয়ন কম।
5.ত্রুটিপূর্ণ পাঠ্যক্রম ও পদ্ধতি শিশুর মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষাদান না হওয়া; পরীক্ষা-কেন্দ্রিক শিক্ষা।
6.বিদ্যালয় ত্যাগের হার বেশি দারিদ্র্য, পুষ্টিহীনতা, অভিভাবক-অসচেতনতা ইত্যাদিতে ড্রপআউট বৃদ্ধি।
মাধ্যমিক শিক্ষা (Secondary Education)
ভূমিকা (Introduction)
মাধ্যমিক শিক্ষা হলো প্রাথমিক শিক্ষার পরবর্তী স্তর, যা শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি কৈশোরকালকে কেন্দ্র করে, যেখানে নৈতিকতা, মূল্যবোধ, ধর্মবোধ ও সামাজিক দায়িত্ববোধ গড়ে ওঠে। মাধ্যমিক শিক্ষা উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি হিসেবে কাজ করে।
উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য (Objectives of Secondary Education)
1. দৈহিক বিকাশ: সুস্থ দেহ ও মন গঠন।
2. নৈতিক বিকাশ: সামাজিক রীতিনীতি, বিশ্বাস ও মূল্যবোধের বিকাশ।
3. প্রাক্ষোতিক বিকাশ: আবেগ ও অনুভূতির নিয়ন্ত্রণ ও বিকাশ।
4. আধ্যাত্মিক চেতনা: অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে এবং মুক্তির পথ সুগম করে।
5. সামাজিক গুণাবলী: সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি।
6. বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা: যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বিজ্ঞানমুখী দৃষ্টি তৈরি।
7. বৃত্তিমূলক শিক্ষা: বাস্তবভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে আগ্রহ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি।
8. সুনাগরিক তৈরী: সুস্থ ও দায়িত্ববান নাগরিক তৈরি করা।
9. প্রগতিশীল সমাজচেতনা: আধুনিক সমাজে অভিযোজন ও সচেতনতা।
10. নেতৃত্বদানের ক্ষমতা: শক্তিশালী ও কার্যকর নেতৃত্ব বিকাশ।
11. পরিবেশ সচেতনতা: দূষণ ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতা।
12. জাতীয়তাবোধ: দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি।
13. আন্তর্জাতিকতাবোধ: বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা।
কাঠামো (Structure of Secondary Education)
নিম্নমাধ্যমিক: অষ্টম থেকে দশম শ্রেণি (2–3 বছর)
উচ্চমাধ্যমিক: একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি (2 বছর)
কোঠারি কমিশন: মাধ্যমিক শিক্ষাকে কিছুটা বৃত্তিমুখী (Vocational) করার সুপারিশ করেছেন।
পাঠ্যক্রম (Curriculum)
1. ভাষা বিভাগ: মাতৃভাষা (প্রথম ভাষা), ইংরেজি (দ্বিতীয় ভাষা)
2. বিজ্ঞান বিভাগ: গণিত, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, জীবন বিজ্ঞান
3. সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগ: ইতিহাস, ভূগোল
4. ঐচ্ছিক বিষয়: শিক্ষার্থীর পছন্দমতো এক বিষয়
ত্রিভাষা সূত্র (Tri-language formula):
মাতৃভাষা
ইংরেজি বা হিন্দি
আধুনিক ভারতীয় বা ইউরোপীয় ভাষা
মাধ্যমিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠানসমূহ (Institutions)
1. দায়িত্বনির্ভর: দিবা বিদ্যালয়, আবাসিক বিদ্যালয়
2. লিঙ্গভিত্তিক: ছেলে বিদ্যালয়, মেয়ে বিদ্যালয়, সহশিক্ষা বিদ্যালয়
3. সময়কালভিত্তিক: জুনিয়র হাইস্কুল, হাইস্কুল, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়
4. অন্যান্য: পাবলিক স্কুল, সরকারি স্কুল, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল, বেসরকারি স্কুল, ধর্মীয় সংস্থা পরিচালিত স্কুল
সমস্যা ও সমাধান (Problems & Solutions)
সমস্যা:
1.বিদ্যালয় ও শিক্ষক অভাব
2.বাস্তবকেন্দ্রিক পাঠ্যক্রমের অভাব
3.আর্থিক সীমাবদ্ধতা
4.অবৈজ্ঞানিক শিক্ষাব্যবস্থা
5.শিক্ষান্তরের সংযোগের অভাব
6.মূল্যায়নের সমস্যা
সমাধান:
1.বাস্তবজীবন ও সামাজিক চাহিদাভিত্তিক পাঠ্যক্রম
2.বৃত্তিমুখী শিক্ষা
3.বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক ও সরঞ্জাম
4.যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ
5.আধুনিক মনোবিজ্ঞানসম্মত শিক্ষাদান
6.গ্রন্থাগার ও পরীক্ষাগারের সুব্যবস্থা
7.সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলী
8.আধুনিক মূল্যায়ন পদ্ধতি
9.দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা
10.স্বাস্থ্য পরীক্ষা
11.নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শন
12.স্টাইপেন্ড প্রদানের ব্যবস্থা
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা (Higher Secondary Education)
ভূমিকা (Introduction)
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা মাধ্যমিক শিক্ষার পরবর্তী দু-বছরের স্তর। এখানে সাধারণধর্মী শিক্ষা ছাড়াও কারিগরি বিদ্যা, চিকিৎসা, কৃষি ও অন্যান্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত। শিক্ষার্থীরা তাদের আগ্রহ, দক্ষতা ও মানসিক ক্ষমতার ভিত্তিতে বিভাগ নির্বাচন করতে পারে।
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যাবলি (Aims and Objectives of Higher Secondary Education)
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যাবলি নীচে আলোচনা করা হল-
1.ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের বিকাশ: মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা তাদের আগ্রহ, প্রবণতা, মানসিক ক্ষমতা, (সাধারণ মানসিক ক্ষমতা, বিশেষ মানসিক ক্ষমতা) প্রভৃতি অনুযায়ী তাদের পছন্দমতো বিভাগে উচ্চমাধ্যমিকে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারে, ফলে বিভাগের প্রতি তাদের ধনাত্মক মনোভাব (Positive Attitude) সৃষ্টি হয়, যা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যতা বিকাশে তাদের সহায়তা করে।
2. সৃজনমূলক ক্ষমতার বিকাশ: উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনমূলক ক্ষমতার বিকাশ সাধন করা। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলিতে সৃজনাত্মক ক্ষমতার বিকাশের সুযোগ থাকায় শিক্ষার্থীরা উদ্দীপিত (Stimulate) হয়, তাদের আত্মপ্রকাশে চাহিদা (Need for Self-expression) বৃদ্ধি পায়, ফলে নতুন নতুন উদ্ভাবনের দ্বার উন্মুক্ত হয়।
3. কর্মোদ্যোগী করে তোলা। উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষায় শিক্ষার্থীর তাদের ইচ্ছা, অনুরাগ, ক্ষমতা অনুযায়ী পর্ষদ নির্ধারিত বিবিধ বিভাগের যেমন সাধারণধর্মী শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, প্রভৃতির, যে-কোনো একটির নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। ফলে তাদের আত্মতুষ্টিতে কর্মোদ্যোগ বৃদ্ধি পায়।
4. বিশেষজ্ঞ কর্মী তৈরি করা: উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল বিশেষজ্ঞ কর্মী তৈরি করা। উচ্চমাধ্যমিক স্তরে সাধারণধর্মী শিক্ষালাভের সুযোগ ছাড়াও যাকে কারিগরি বিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, কৃষিবিদ্যা প্রভৃতি। মেধা প্রবণতা প্রভৃতি অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা ভরতি হয়। এখানে মেধা ও ব্যক্তিত্বের ক্ষুরণ হেতু বিশেষজ্ঞ মানুষ তৈরি হয়।
5.মানসিক স্বাস্থ্যের সংরক্ষণঃ উচ্চমাধ্যমিকে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দ, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যাভ্যাসের সুযোগ পায়, ফলে তাদের মানসিক শক্তির স্ফুরণ ঘটে। আবার মানসিক শক্তির স্ফুরণের ফলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সংরক্ষিত হয়।
6. চিন্তাশক্তি, বিচারশক্তি প্রভৃতির উন্মেষ ঘটানো: উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার আর-এক উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে চিন্তাশক্তি, বিচারশক্তি প্রভৃতির উন্মেষ ঘটানো। উচ্চমাধ্যমিকে ভাষা, আবশ্যিক ঐচ্ছিক বিষয়সমূহ, সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলির অনুশীলন করা হয়, ফলে দেহ ও মনের সুসামঞ্জস্যপূর্ণ বিকাশ ঘটে। উক্ত বিকাশে চিন্তাশক্তি, বিচারশক্তি প্রভৃতির উন্মেষ ঘটে।
7. সামাজিক গুণাবলির বিকাশসাধন ও সুনাগরিক তৈরি: উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল মানববন্ধন রচনা করে সামাজিক গুণাবলির বিকাশ সাধন ও সুনাগরিক তৈরি করা।
৪. আর্থিক স্বনির্ভরতা দান: উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীরা যাতে ভবিষ্যৎ জীবনে আর্থিক দিকে স্বনির্ভর হয়ে জীবন ও জীবিকার পথ মসৃণ করতে পারে। এই বিষয়ে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষায় যে অঙ্কুরের উদ্দ্গীরণ ঘটে, তা ভবিষ্যৎ জীবনে স্বনির্ভর হওয়ার পথ প্রশস্ত করে।
9. জাতীয় সংহতির ও আন্তর্জাতিকতা বোধের বিকাশ: উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা নৈর্ব্যক্তিকভাবে (Objectively) চিন্তা করতে শেখে, মন ভৌগোলিক সীমা অতিক্রম করে সুদূরপ্রসারী হয়, যৌথ দায়িত্ববোধের (Joint Responsibility) জাগরণ ঘটে। ফলে দায়িত্ববোধের মধ্যে জাতীয় সংহতি (Na-tional Integration) এবং আন্তর্জাতিকতা বোধের (International Understanding) বিকাশ ঘটে।
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার কাঠামো (Structure of Higher Secondary Education)
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার কাঠামো নিম্নরূপ-
পূর্বে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভরতির ন্যূনতম বয়স ছিল 6+ বছর। কিন্তু বর্তমানে সরকারি নির্দেশে তা হয়েছে ৪ বছর, ফলে V-এ এবং XI-এ ভরতির সর্বনিম্ন বয়স হয়েছে যথাক্রমে 9+ এবং 15+ বছর।
বিদ্যালয়ে দশ বছরের শিক্ষা শেষ হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও সামর্থ্য অনুযায়ী দুই বছরের শিক্ষাগ্রহণ করে এটা হল উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাস্তর (একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি)
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রম
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রম (Curriculum of Higher Secondary Education)
উচ্চমাধ্যমিক পাঠ্যক্রম (Curriculum) দুটি ধারায় বিভক্ত। সেগুলি হল-
1.সাধারণ ধারার পাঠ্যক্রম
2.বৃত্তিমূলক ধারার পাঠ্যক্রম
1. ভাষা: এখানে 'ক বিভাগ' এবং 'খ বিভাগ' থেকে একটি করে ভাষা পড়তে হয়। ভাষার দক্ষতা অর্জনের উদ্দেশ্যে পাঠ্যক্রমে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
2. আবশ্যিক ঐচ্ছিক বিষয়: আবশ্যিক ঐচ্ছিক বিষয়গুলি শিক্ষার্থীদের বৈজ্ঞানিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভৃতি দিকে মানসিক বিকাশের সহায়ক নিয়ম অনুযায়ী যে-কোনো তিনটি ঐচ্ছিক বিষয় শিক্ষার্থীকে নিতে হয়। আবশ্যিক ঐচ্ছিক বিষয়কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যথা- (i) পরীক্ষাগারে নির্ভর বিষয়সমূহ (পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিদ্যা, কম্পিউটার, বিজ্ঞান প্রভৃতি)। (ii) পরীক্ষাগার নির্ভরহীন বিষয়সমূহ (ইতিহাস, শিক্ষাবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, গণিত, দর্শন ইত্যাদি)।
3. অতিরিক্ত বিষয়: বাধ্যতামূলক বিষয়গুলির বাইরে শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিক পর্ষদ নির্ধারিত যে কোনো একটি বিষয় অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে পড়তে পারে। অতিরিক্ত বিষয় শিক্ষার্থীর জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত করে।
4. সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলি: সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলিতে আছে কর্মশিক্ষা, শারীরশিক্ষা, সমাজসেবা প্রভৃতি। এর উদ্দেশ্য হল পুথিগত শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে কর্মভিত্তিক বাস্তবসম্মত জ্ঞানার্জন করা, দেহকে সুস্থ-সবল রাখা, সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা।
বৃতিমূলক ধারার পাঠ্যক্রমে গঠনগত বিন্যাস নিম্নরূপ-
1. ভাষা: এখানে 'ক বিভাগ' আছে মাতৃভাষা/আধুনিক ভারতীয় ভাষাসমূহ এবং 'খ বিভাগে' আছে ইংরেজি/অন্যান্য। প্রথম ভাষা ইংরেজি না হলেও, ইংরেজি বিষয়টি নেওয়া বাধ্যতামূলক।
2. আবশ্যিক ঐচ্ছিক বিষয়: এখানে পরীক্ষাগার নির্ভর বিষয়গুলি হল-পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, জীববিদ্যা প্রভৃতি। শিক্ষার্থীদের যে-কোনো তিনটি বিষয় নিতে হয়।
3. বৃত্তিমূলক বিষয়সমূহঃ এই বিভাগের ক্ষেত্রগুলি হল কারিগরি শিক্ষা, কৃষিবিজ্ঞান, বয়নশিল্প, প্যারা-মেডিকেল প্রভৃতি। এখানে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা, মানসিক ক্ষমতা, প্রবণতা প্রভৃতির দিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়।
4. সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলি: সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলিতে আছে কর্মশিক্ষা, শারীরশিক্ষা, সমাজসেবা প্রভৃতি। শিক্ষার্থীদের দৈহিক, মানসিক, প্রাক্ষোভিক বিকাশের জন্য, কর্মভিত্তিক বাস্তব জ্ঞানার্জন করার জন্য সামাজিকতা অর্জনে সহায়তা করার জন্য সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
উচ্চশিক্ষা-উচ্চশিক্ষার অবস্থান সম্পর্কে কোঠারি
কোঠারি কমিশন, (1964-'66) উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে কিছু তাৎপর্যপূর্ণ সুপারিশ করেছেন-
1. উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশগুলি হল-
(a) বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যকে জাতীয় জীবনে সুনিশ্চিত করা।
(b) বয়স্ক শিক্ষা, আংশিক সময়ের শিক্ষা ও পত্রযোগে শিক্ষার প্রবর্তন করা।
(c) শিক্ষার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়গুলিকে সাহায্য করা।
(d) শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়ন ও সম্প্রসারণ করা।
(e) অত্যন্ত কিছু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক শিক্ষামানের স্তরে উন্নীত করা।
2. উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন, ভাষা সমস্যার সমাধান ও অন্যান্য বিষয়ে কমিশনের সুপারিশগুলি হল-
(a) শিক্ষামানের উন্নতিকল্পে অনুমোদনপ্রাপ্ত কলেজগুলির সাজসরঞ্জাম, শিক্ষা প্রভৃতির সংস্কার, শিক্ষকের গুণাগুণ প্রভৃতির ওপর কমিশন গুরুত্ব দিয়েছেন।
(b) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা, প্রশাসন সংস্কার প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়নের কথা ব্যক্ত করা হয়েছে।
(c) আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ও গবেষণার জন্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে 'Advanced Centres' গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
d) আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাকেন্দ্ররূপে একটি কারিগরি একটি কৃষি ও চারটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়কে Major University'-তে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে।
3. ভাষার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, আঞ্চলিক ভাষা হবে স্নাতক স্তরে শিক্ষার মাধ্যম।
4. হিন্দি সর্বভারতীয় স্তরে গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত ইংরেজি হবে স্নাতকোত্তর স্তরে শিক্ষার মাধ্যম।
5.উচ্চ শিক্ষাস্তরে কোনো ভাষাকে বাধ্যতামূলকভাবে পাঠ্যবিষয় রাখা যাবে না।
6.কমিশনের রিপোর্টে, শ্রম এবং সমাজসেবা শিবিরে অংশগ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
7. ছাত্র অসন্তোষ নিরসনকল্পে সর্ব বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বক্ষণের জন্য 'Dean of Student Welfare নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
8. কমিশনের রিপোর্টে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে স্বাধীনতা দানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
9. রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, প্রথম ডিগ্রি অর্জনের জন্য শিক্ষাকাল ও বছরের কম হবে না। পরবর্তী ডিগ্রির জন্য শিক্ষাকাল 2 বা 3 বছরের হবে।
10.প্রথম বছর অন্তে ও বছরের ডিগ্রি কোর্সের নির্বাচিত কিছু বিষয়ে ও বছরের বিশেষ ডিগ্রি কোর্সের ব্যবস্থা থাকবে। এক্ষেত্রে প্রথম ডিগ্রি প্রাপ্তির জন্য 4 বছর পড়তে হবে।
11.প্রচলিত কোর্স এবং দীর্ঘতর কোর্সের মধ্যে সমন্বয়সাধনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
12.কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ও বছরের স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য উন্নত স্নাতক কোর্স চালু করা যেতে পারে।
13.কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উন্নতমানের গ্রন্থাগার গড়তে হবে।
14.অধ্যাপকের সংখ্যা না বাড়িয়ে ব্যয় হ্রাসকল্পে গবেষক শিক্ষার্থীদের দিয়ে আংশিকভাবে অধ্যাপনার কাজ পরিচালনার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা-(Vocational and Technical Education)
ভূমিকা (Introduction): প্রাচীন যুগে অন্নবস্ত্রের মতো কিছু মৌলিক চাহিদার নিবৃত্তিতে মানুষ তুষ্ট হকত। জীবন ছিল সরল, ও অনাড়ম্বর। তারপর যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রুচি, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, জীবনাদর্শ প্রভৃতির পরিবর্তন আসে। নির্ভরশীলতা বোধের বিকাশ হতে থাকে। মানুষের চাহিদা বাড়ে, এক চাহিদার নিবৃত্তিতে শত চাহিদার জন্ম হয়। বলতে গেলে অতীতের সংস্কৃতি অতীতের গহ্বরে জমা রেখে মনুষ অজস্র প্রাপ্তির নেশায় মত্ত হয়। অজস্র চাহিদা পরিতৃপ্তির জন্য বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজন হয়। পরাধীন ভারতে সাধারণধর্মী শিক্ষার দ্বারা কেরানি গড়ার নীতি অবলম্বন করা হত। বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা ছিল অবহেলিত। তবে 1854 খ্রিস্টাব্দে উডের ডেসপ্যাচে বৃত্তিমূলক শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হয়। 1882-1883 খ্রিস্টাব্দে হান্টার কমিশন 'B' কোর্স নামে বৃত্তিমুখী শিক্ষাদানের জন্য সুপারিশ করেন। 1906 খ্রিস্টাব্দের 25 জুলাই বঙ্গীয় কারিগরি বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। জাতীয় শিক্ষা পরিষদ 1906 খ্রিস্টাব্দে যাদবপুরে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নির্মাণ করেন যা 1956 খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়।
স্যাডলার কমিশন (1917 খ্রিস্টাব্দে), মুদালিয়ার কমিশন (1952-1953 খ্রিস্টাব্দে), কোঠারি কমিশন (1964-196 খ্রিস্টাব্দে) বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আবার, কারিগরি শিক্ষার উন্নতিকল্পে 1945 খ্রিস্টাব্দে India Council of Technical Education গঠিত হয়েছে। আজকের যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা সর্বস্ব কারার যুগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ধারণা (Concept) (যে শিক্ষা দ্বারা কোনো শিক্ষার্থী কাজের মাধ্যমে জীবিকা অর্জনের উপযোগী জান ও দক্ষতা অর্জন করে, শিক্ষাকে বলে বৃত্তিমুখী শিক্ষা) যেমন- আইনবিদ্যা, সাংবাদিকতা প্রভৃতি।
আবার, যে শিক্ষা দ্বারা শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, শিল্প, বাণিজ্য প্রভৃতি প্রয়োগ করে যন্ত্রপাতির ব্যবহার সম্পর্কে অবহিত হয়ে সুদক্ষ কর্মী, প্রযুক্তিবিদে পরিণত হয়, সেই শিক্ষাই হল কারিগরি শিক্ষা। কারিগরি শিক্ষার অর্থ হল শিল্প নৈপুণ্য-সম্বন্ধীয় শিক্ষা যেমন-কৃষি বা কলকারখানার যন্ত্রসামগ্রী পরিচালনার দক্ষতা অর্জন।
বৃত্তিমুখী শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হল-জুনিয়ার টেকনিক্যাল স্কুল, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মেডিকেল কলেজ, চিত্রকলা প্রশিক্ষণের কেন্দ্র, আইন পঠনের প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি।
বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা স্ব-স্ব ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন হয়, তাদের বাস্তবধর্মী জ্ঞানের বিস্তৃতি ঘটে। বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার্থীদের অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাগুলির ব্যাপ্তি ঘটায়।
সম্পর্ক (Relation): বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার মধ্যে সম্পর্ক বিদ্যমান। সম্পর্কের ক্ষেত্রগুলি হল-
1.বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা উভয়েই শিক্ষার্থীদের ক্ষমতা সম্বন্ধে সচেতন করে এবং জ্ঞানের পরিধির
বিস্তৃতি ঘটায়।
2. বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষায় ব্যক্তিস্বার্থ তথা সমাজস্বার্থ রক্ষিত হয়।
3. উভয়েই জীবিকা অর্জনে সহায়ক।
4. উভয় শিক্ষাই কর্মকেন্দ্রিক ও সমাজের আর্থিক বুনিয়াদ দৃঢ় করতে সহায়তা করে থাকে।
5. উভয় শিক্ষাই ভবিষ্যৎ জীবনে শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক দিকে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ প্রশস্ত করে।
6. বৃত্তিমুখী শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষা উভয়েই দেশের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির সহায়ক।
7. উভয়েই শিক্ষার্থীদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশ ঘটায়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে একাগ্রতা, ধৈর্য, নিয়মানুবর্তিতা, আত্মনির্ভরতা, সহযোগিতা প্রভৃতি গুণগুলির স্ফুরণ ঘটে।
৪. উভয়ক্ষেত্রে শ্রমের প্রতি শিক্ষার্থীদের মর্যাদাবোধ জাগে। তাদের চরিত্র সুগঠিত হয়।
9. বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে।
10. শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক মনোভাব গড়ে ওঠে।
মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ (Institutions upto Secondary Level) মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার প্রতিষ্ঠানসমূহ হল
1. জুনিয়ার টেকনিক্যাল বিদ্যালয়: জুনিয়ার টেকনিক্যাল বিদ্যালয়গুলি প্রধানত সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়। অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা উক্ত বিদ্যালয়ে ভরতির সুযোগ পায়। ফিটার, টার্নার, ওয়েল্ডিং, ব্ল্যাকস্মিথ প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরীক্ষায় সফল পরীক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।
2. ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইন্সটিটিউট (I. T. I.): Industrial Training Institute হল কর্মকেন্দ্রিক
কারিগরি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে ভরতি হতে হলে প্রার্থীকে অন্ততপক্ষে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে হবে। এখানে ইলেকট্রিক, কার্পেন্টার, ওয়েল্ডার প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিছু প্রতিষ্ঠানে ড্রাফট্সম্যান শিক্ষা, সার্ভে পড়ার সুযোগ আছে, সেখানে শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম যোগ্যতা হতে হবে মাধ্যমিক পাস। শিক্ষান্তে সফল শিক্ষার্থীদের যে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, সেই সার্টিফিকেট নিয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্ব পায়।
বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা(Vocational and Technical Education)
(pes) বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার প্রতিষ্ঠানের ধরনগুলি হল-
ও নির্দিষ্ট কর্মভিত্তিক কারিগরি শিক্ষার জন্য (Job based Technical Education) প্রতিষ্ঠানের ধরন হল--
1. জুনিয়ার টেকনিক্যাল বিদ্যালয়। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইন্সটিটিউট (LTI) প্রভৃতি।
2. ডিপ্লোমা কোর্সের (Diploma Course) অন্য প্রতিষ্ঠানের ধরন হল পলিটেকনিক (Polytechnic) কলেজ।
3. স্নাতক, স্নাতকোত্তর কোর্সের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলি হল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চিত্রকলা প্রশিক্ষণের কলেজ ইত্যাদি।
4. গবেষণার (Research) জন্য প্রতিষ্ঠান হল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়।
বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার পাঠ্যক্রমের পাঠ্যক্রম
বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার পাঠ্যক্রমের বিস্তৃতি ও ভিন্নতা অনেক বেশি। তাই পাঠ্যক্রম (Curriculum) রচনায় সুনির্দিষ্ট ছক বিন্যাস করা যায় না।
বৃত্তিমূলক ও কারিগরি বিদ্যার স্তরভেদে পাঠ্যক্রমের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। যেমন প্রথম স্তর-নির্দিষ্ট কর্মভিত্তিক শিক্ষা (Job Based Education)-এর সঙ্গে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের পাঠ্যক্রমের যথেস্ট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। তবে স্তরভেদে পাঠ্যক্রমের (Curriculum) ভিন্নতা থাকলেও প্রতিটি স্তরে তিনটি অংশ থাকে, সেগুলি হল-
(a) তাত্ত্বিক অংশ (Theoretical Part),
(b) ব্যবহারিক অংশ (Practical Part),
(c) প্রয়োগমূলক অংশ (Application Part)।
(a) তাত্ত্বিক অংশ (Theoretical Part): এই অংশে তাত্ত্বিক তথ্য (Theoretical Information) পরিবেশন করা হয়। এতে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের (Development of Knowledge) বিকাশ হয়।
(b) ব্যবহারিক অংশ (Practical Part): তাত্ত্বিক অংশে (Theoretical part) সংগৃহীত তথ্যাদি অনুশীলন করার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়ে, তাদের বৌদ্ধিক জ্ঞানার্জনে (Cognitive Knowledge) অসুবিধার সৃষ্টি হয়। তাই এই স্তরে কিছু ব্যবহারিক উদাহরণ (Practical Examples), কিছু ব্যবহারিক কাজের (Practical works) মাধ্যমে বিষয়টিকে সহজ করে উপলব্ধিযোগ্য করা হয়।
(c) প্রয়োগমূলক অংশ (Application Part): তাত্ত্বিক অংশে সংরক্ষিত তথ্য, ব্যবহারিক অংশ দ্বারা সমৃদ্ধ হওয়ার পর একে বাস্তবক্ষেত্রে যাতে শিক্ষার্থীরা প্রয়োগ করতে পারে, সেজন্য তার উপযোগী কার্যাবলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রয়োগমূলক অংশের (Application part) অন্যতম উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্তদৃষ্টির বিকাশ ও নতুন উদ্ভাবনী শক্তির জাগরণ।
প্রথম স্তরভুক্ত (নির্দিষ্ট কর্মভিত্তিক শিক্ষা) পাঠ্যক্রমের বিষয়গুলি হল-ফিটার, টার্নার, ওয়েল্ডার, কার্পেন্টার, ইলেকট্রিক ইত্যাদি।
ও দ্বিতীয় স্তরভুক্ত (ডিপ্লোমা কোর্স) পাঠ্যক্রমের বিষয়গুলি হল-সিভিল, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, মাইনিং, টেলিকমিউনিকেশন, মুদ্রণ, কম্পিউটার প্রভৃতি।
ঐ তৃতীয় স্তরভুক্ত (স্নাতক, স্নাতকোত্তর) পাঠ্যক্রমের বিষয়গুলি হল-সিভিল, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, টেলিকমিউনিকেশন, আর্কিটেকচার, মাইনিং, কেমিক্যাল, কম্পিউটার ইত্যাদি।
মাধ্যমিক স্তরের পর শিক্ষার সুযোগসুবিধা (Opportunities of Education after Secondary Stages)
মাধ্যমিক স্তরের পর শিক্ষার সুযোগসুবিধা-
পলিটেকনিক (Polytechnic): ডিপ্লোমা প্রাপ্তির প্রতিষ্ঠান হল পলিটেকনিক (Polytechnic), এখানে ভরতির জন্য প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা হবে ন্যূনতম মাধ্যমিক পাস। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে ভরতি হওয়া যায়। এই শিক্ষার সময়কাল তিন বছর। পলিটেকনিকের অন্তর্গত বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলি হল-মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, সিভিল, মাইনিং, টেলিকমিউনিকেশন, মুদ্রণ, কম্পিউটার প্রভৃতি। এইসব ক্ষেত্রে বিভিন্ন পাঠ্যক্রম অনুসরণ করা হয়। তবে কিছু সাধারণ বিষয় শিক্ষার্থীকে পড়তে হয়। শিক্ষান্তে সফল শিক্ষার্থীদের ডিপ্লোমা উপাধি দেওয়া হয়। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা উপাধিকে মর্যাদা দেওয়া হয়।
উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পর শিক্ষার সুযোগসুবিধা (কোর্সগুলির নাম) (Opportunities of Education after Higher Secondary Stage-(Names of Courses
উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পর শিক্ষার সুযোগসুবিধাগুলি হল-
1. সাধারণধর্মী
শিক্ষা: B.A., B.Sc., B.Com., B.A. (Hons.), B.Sc. (Hons.), B.Com. (Hons.)
2. ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা:
B.E., (Bachelor of Engineering).
3. চিকিৎসা বিদ্যা: M.B.B.S. (Bachelor of Medicine & Bachelor of Surgery).
4. কৃষিবিদ্যা: B.Sc. (Ag.), (Bachelor of Science, Agriculture).
5. আইনবিদ্যা: L.L.B., (Bachelor of Law).
6. কারিগরিবিদ্যা: (i) L.I.T. (Indian Institute of Technology).
(ii) B.Tech. (Bachelor of Technology).
7. প্রন্থাগার শিক্ষা:
B.L.I.S., (Bachelor of Library and Information Science).
৪. বাণিজ্যিক বিদ্যা: Indian Institute of Management.
9. ধাত্রী বিদ্যা: Bachelor of Nursing.
উপসংহার
কোঠারি কমিশন (1964-66) ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিকীকরণ ও জাতির সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রাসঙ্গিক সুপারিশ করেছে। কমিশনের মূল লক্ষ্য ছিল শিক্ষা শুধুমাত্র পঠনপাঠনের মাধ্যম নয়, বরং শিক্ষার্থীর দৈহিক, মানসিক, নৈতিক, আধ্যাত্মিক ও সামাজিক বিকাশ নিশ্চিত করা। শিক্ষাকে ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে সমন্বয় রক্ষাকারী হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।মাধ্যমিক শিক্ষায় কমিশন শিক্ষার্থীদের জন্য নিম্নমাধ্যমিক (অষ্টম থেকে দশম) এবং উচ্চমাধ্যমিক (একাদশ ও দ্বাদশ) পর্যায় নির্ধারণ করেছে। শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে রয়েছে সুনাগরিক তৈরি, প্রগতিশীল সমাজচেতনা, নেতৃত্বদানের ক্ষমতা, পরিবেশ সচেতনতা, বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা এবং বৃত্তিমুখী শিক্ষার উন্নয়ন।ভাষা শিক্ষায় কমিশন ত্রিভাষা নীতি (Tri-language Formula) প্রবর্তন করেছে, যা মাতৃভাষা, হিন্দি/ইংরেজি এবং অন্য একটি আধুনিক ভাষাকে অন্তর্ভুক্ত করে। এটি শিক্ষার্থীদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগ সক্ষম করে।পাঠ্যক্রম বাস্তবমুখী, বৃত্তিমুখী ও শিক্ষার্থীবান্ধব হবে, যা শিক্ষার্থীর বয়স, আগ্রহ ও সামাজিক প্রয়োজন অনুযায়ী সাজানো। এছাড়াও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ, পর্যাপ্ত বিদ্যালয় ভবন, গ্রন্থাগার ও পরীক্ষাগার ব্যবস্থা, সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম এবং আধুনিক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করার ওপর জোর দেয়া হয়েছে।উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীরা তাদের আগ্রহ, ক্ষমতা ও মানসিক সক্ষমতা অনুযায়ী সাধারণধর্মী বা কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে, যা তাদের বিশেষজ্ঞ ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে।
সারসংক্ষেপে, কোঠারি কমিশন একটি সমন্বিত, বাস্তবমুখী ও প্রগতিশীল শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করেছে, যা শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ নিশ্চিত করে, দেশের অগ্রগতি ও জাতীয় উন্নয়নের জন্য শক্ত ভিত্তি গড়ে তোলে।
Comments
Post a Comment