দর্শন কি, শিক্ষা দর্শন কি এর প্রকৃতি,পরিধি ও দর্শন ও শিক্ষা দর্শন এর সম্পর্ক।

জীব ও জাগতের ব্যাখ্যা হল দর্শন (A prational explanation of man and universe) দর্শন এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Philosophy গ্রীক ভাষাই Philo ও Sophia থেকে এসেছে। Philo শব্দ এর অর্থ হল ''Love'' বা ভালবাসা এবং Sophia শব্দ এর অর্থ হল ''Wisdom'' বা জ্ঞান। 
            
সুতারাং, Philosophy শব্দের বুৎপত্তি গত অর্থ হল Love Of Wisdom  বা  জ্ঞানের প্রতি ভালবাসা। 

দর্শনের সংজ্ঞা ;
বিখ্যাত দার্শনিকদের দেওয়া সংজ্ঞার মাধ্যমে দর্শনের স্বরূপ বোঝা যায়:

১. অ্যারিস্টটল (Aristotle) বলেছেন:
"Philosophy is a science which discovers the real nature of supernatural elements." 
"দর্শন হল এমন এক বিজ্ঞান যা অতিপ্রাকৃতিক উপাদানগুলির প্রকৃত স্বরূপ আবিষ্কার করে।"

২. ফিখটে (Fichte) বলেছেন:
"Philosophy is the science of Knowledge." 
 "দর্শন হল জ্ঞানের বিজ্ঞান।"

৩. প্লেটো (Plato) বলেছেন:
"Philosophy aims at the knowledge of the eternal nature of things." 
"দর্শনের লক্ষ্য হল বস্তুর চিরন্তন স্বরূপ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা।"

৪. ডক্টর স্যার ব্রজেন্দ্রনাথ শীল (Dr. Sir Brajendranath Seal) বলেছেন:
"দর্শন হল বাস্তব সত্তার যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা।" 


শিক্ষা দর্শন (Educational Philosophy) 

ভূমিকা

শিক্ষা দর্শন হল দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োগমূলক শাখা। আধুনিক যুগে দর্শন শিক্ষার সকল দিককে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। দর্শনের প্রধান শাখাগুলি— যেমন জ্ঞানবিজ্ঞান (Epistemology), নীতিবিদ্যা (Axiology), যুক্তিবিদ্যা (Logic) এবং তত্ত্ববিদ্যা (Metaphysics)—সকলই শিক্ষা-প্রক্রিয়াকে সমৃদ্ধ করছে। বস্তুত, শিক্ষা দর্শন হল দর্শনের প্রয়োগমূলক রূপ। যেহেতু দর্শনকে "সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের জননী" বলা হয়, তাই শিক্ষাক্ষেত্রে এর প্রভাব অপরিসীম।

অতইব , শিক্ষাদর্শন হল দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগমূলক শাখা। এটি শিক্ষার বিভিন্ন মৌলিক দিক যেমন শিক্ষার লক্ষ্য, পাঠক্রম, পদ্ধতি, শিক্ষকের ভূমিকা, মূল্যায়ন, বিদ্যালয়ের পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়ে সফলভাবে দার্শনিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে যুক্তিসঙ্গত সমাধান ও দিকনির্দেশনা প্রদান করে।

তাই আধুনিক শিক্ষাবিদগণ মনে করেন যে, শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ও ক্ষেত্রে উদ্ভূত জটিল সমস্যাগুলোর সমাধান শিক্ষাক্ষেত্রে দর্শনের নীতি ও রীতির প্রয়োগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়।


জন ডিউই-এর উক্তি; 

শিক্ষাবিদ জন ডিউই (John Dewey) শিক্ষা দর্শনের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন:

"Educational philosophy is the most significant phase of philosophy, for it is through the process of education that knowledge is obtained and disseminated."

"শিক্ষা দর্শন হল দর্শনের সর্বাধিক তাৎপর্যপূর্ণ দিক, কারণ শিক্ষার প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই জ্ঞান অর্জিত হয় এবং তার বিস্তার ঘটে।"

According to Gentile: 
"The process of education cannot go along right lines without the help of philosophy."

According to Spencer: 
"True education is practicable only by a true philosopher."



শিক্ষাদর্শনের প্রকৃতি ও স্বরূপ (Nature of Educational Philosophy)

দর্শন জীবনের প্রকৃত তাৎপর্য উপলব্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির জীবনের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ ঘটে। দর্শন ও শিক্ষা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জীবন দর্শন বাস্তব জীবনে প্রয়োগ হয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে তার প্রতিফলন দেখা যায়, যা শিক্ষাদর্শন নামে পরিচিত। শিক্ষাদর্শনের প্রকৃতি নিম্নরূপ:

১. জীবনের মৌলিক নীতি নির্ধারক:
শিক্ষাদর্শনের মাধ্যমে ব্যক্তিজীবনের মৌলিক নীতি নির্ধারিত হয়, যার ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রক্রিয়া পরিচালিত হয়।

২. প্রয়োগমূলক বিজ্ঞান:
শিক্ষাদর্শন দর্শনের একটি প্রয়োগমূলক শাখা। এই বিজ্ঞান শিক্ষাদর্শনের সাহায্যে শিক্ষায় দার্শনিক নীতিগুলোর ব্যবহারিক প্রয়োগ ঘটে।

৩. ব্যক্তি ও সমাজ জীবন কেন্দ্রিক:
শিক্ষাদর্শন ব্যক্তি ও সমাজ জীবনকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়। ফলে ব্যক্তির পাশাপাশি সমাজের সকল দিকের উপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়।

৪. বিশ্লেষণ ও সংশ্লেষণ ক্ষমতাসম্পন্ন:
শিক্ষাদর্শন শিক্ষার নানা সমস্যার যেমন বিশ্লেষণ করে, তেমনি তার সমাধানের জন্য নতুন বিষয়ের সংশ্লেষণও ঘটায়।

৫. গতিশীল প্রক্রিয়া:
শিক্ষাদর্শন একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সংগতি রেখে এটি ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়, যা ব্যক্তি ও সমাজকে গতিশীল করে।

৬. জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ ও উন্নয়ন:
শিক্ষাদর্শনের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ ও তার উন্নয়ন। এর মাধ্যমে ব্যক্তির আত্মিক লক্ষ্য যেমন নির্ধারিত হয়, তেমনি তার পরিপূর্ণ বিকাশও ঘটে।

৭. সত্যানুসন্ধান প্রক্রিয়া:
শিক্ষাদর্শন শিক্ষার উন্নয়নের জন্য প্রতিনিয়ত গবেষণা, নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করে, ফলে শিক্ষায় নতুন বিষয় সংযুক্ত হয়ে এটি আরও সমৃদ্ধ হয়।

৮. বিজ্ঞানভিত্তিক:
শিক্ষাদর্শন একটি বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে শিক্ষা পরিচালিত ও সংগঠিত হয়।

৯. জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ব্যবহারিক প্রয়োগ:
শিক্ষাদর্শনের সাহায্যে শিক্ষাক্ষেত্রে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ব্যবহারিক প্রয়োগ ঘটে, ফলে শিক্ষার্থীরা তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবহারিক শিক্ষা লাভ করে।

১০. মানসম্মত শিক্ষার হাতিয়ার:
শিক্ষাদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষার মান, পাঠ্যক্রম, পদ্ধতি, সংগঠন, মূল্যায়ন প্রণালী ইত্যাদি সঠিকভাবে নির্ধারিত ও গঠিত হয়, যা শিক্ষাকে বেশি ফলপ্রসূ করে।

১১. গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি:
শিক্ষাদর্শনের একটি প্রকৃতি হল গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। এই দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে শিক্ষায় সহযোগিতা, স্বাধীনভাবে শিখন, মতবাদ প্রকাশের সুযোগ ইত্যাদি বিরাজ করে।

শিক্ষাদর্শনের পরিধি (Scope of Educational Philosophy)

শিক্ষাদর্শনের পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। এটি শিক্ষা সংক্রান্ত সকল তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিক নিয়ে আলোচনা করে। এর প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলো হল:

১. শিক্ষার লক্ষ্য (Aims of Education):
ব্যক্তির চাহিদা ও সামাজিক চাহিদাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়। শিক্ষাদর্শন শিক্ষার লক্ষ্য কী হবে, তা নির্ধারণে সাহায্য করে।

২. পাঠ্যক্রম (Curriculum):
শিক্ষার লক্ষ্যকে ভিত্তি করে পাঠ্যক্রম বা বিষয়বস্তু নির্ধারিত হয়। পাঠ্যক্রম নির্মাণে দার্শনিক চিন্তাভাবনার গভীর প্রভাব থাকে।

৩. শিখন-শিক্ষণ পদ্ধতি (Methods of Teaching-Learning):
বিভিন্ন দার্শনিক মতবাদ শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতিকে প্রভাবিত করে। তাই শিখন পদ্ধতি শিক্ষাদর্শনের পরিধির অন্তর্গত।

৪. শিক্ষক (Teacher):
শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়ার একটি key উপাদান হলেন শিক্ষক। শিক্ষকের ভূমিকা ও দায়িত্ব কেমন হবে, তা দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়।

৫. শিক্ষার্থী (Student):
আধুনিক child-centric শিক্ষায় শিক্ষার্থীই শিক্ষাজগতের কেন্দ্রে রয়েছে। শিশুর প্রকৃতি, চাহিদা ও বিকাশ সম্পর্কিত দার্শনিক ধারণা শিক্ষাকে প্রভাবিত করে।

৬. পাঠ্যপুস্তক (Textbook):
পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে শিক্ষাদর্শন নির্দেশনা দিয়ে থাকে। শিক্ষার্থীর বয়স ও সামাজিক প্রেক্ষাপটকে ভিত্তি করে পাঠ্যবই রচিত হয়।

৭. শৃঙ্খলা (Discipline):
শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বের বিকাশে শৃঙ্খলা অপরিহার্য। শৃঙ্খলা নির্ধারণে শিক্ষাদর্শন বিশেষ ভূমিকা রাখে।

৮. মূল্যায়ন (Evaluation):
মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর পারদর্শিতা যাচাই করা হয়, যা শিক্ষাদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়।

৯. শিক্ষা প্রশাসন (Educational Administration):
শিক্ষা প্রশাসনের কাজের উপর শিক্ষার অগ্রগতি অনেকাংশে নির্ভর করে। শিক্ষাদর্শন শিক্ষা প্রশাসন কীভাবে হবে, তা নির্ধারণে সাহায্য করে।

১০. অন্যান্য বিষয়:
শিক্ষার রূপ, বংশগতি ও পরিবেশ, মূল্যবোধের শিক্ষা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বোধের শিক্ষা, শান্তির শিক্ষা, শিক্ষাবিদদের চিন্তাভাবনা ইত্যাদি বিষয়ও শিক্ষাদর্শনের আলোচ্য।

সারসংক্ষেপ
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে শিক্ষাদর্শনের পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। শিক্ষার সকল তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিক এর আলোচনার অন্তর্ভুক্ত। সময়ের সাথে সাথে এর পরিধি আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে।


শিক্ষা ও দর্শনের সম্পর্ক (Relation between Education and Philosophy)

দর্শন জীবনের তাত্ত্বিক দিক নিয়ে আলোচনা করে, আর শিক্ষা মানব জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটায় ও একজন সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। আধুনিক শিক্ষাবিদদের মতে, "শিক্ষা যদি মানবদেহ হয়, তবে দর্শন হল তার আত্মা।" (If Education is the physical body, philosophy is its soul)।

শিক্ষাবিদ রস (Ross) বলেছেন:

"Philosophy and Education are two sides of the same coin." বাংলায়: "দর্শন এবং শিক্ষা হল একই মুদ্রার দুই পিঠ মাত্র।"

সুতরাং, দর্শন ও শিক্ষা একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। এই সম্পর্ককে দুটি দিক থেকে বিশ্লেষণ করা যায়:

ক. তাত্ত্বিক দিক (Theoretical Aspect)

i. দর্শন শিক্ষার নির্দেশনার নির্ধারক:
মানব জীবনের একটি সচেতন প্রক্রিয়া হল শিক্ষা, যার জন্য প্রয়োজন সঠিক নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধান। দর্শনই জীবনের লক্ষ্য ও আদর্শ নির্ধারণ করে দেয়, ফলে শিক্ষাকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।

ii. দর্শনের প্রয়োগ ক্ষেত্র হল শিক্ষা:
দর্শনের মূল কাজ হল শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণে সাহায্য করা। অন্যদিকে, শিক্ষা হল দর্শনের প্রায়োগিক রূপ। শিক্ষাবিদ অ্যাডামস (Adams) বলেছেন, "Education is the dynamic side of philosophy" – অর্থাৎ, "শিক্ষা হল দর্শনের গতিশীল দিক।"

iii. মহান দার্শনিকরাই মহান শিক্ষাবিদ:
শিক্ষা তত্ত্বের ইতিহাস থেকে দেখা যায়, মহান দার্শনিকরাই মহান শিক্ষাবিদ। সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, জন ডিউই, মহাত্মা গান্ধী, ড. জাকির হোসেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ প্রমুখ তাদের দার্শনিক চিন্তাভাবনা দ্বারা শিক্ষাকে সমৃদ্ধ করেছেন। জে.এস. রস (J.S. Ross) বলেছেন, "The great philosophers have also been the great Educators."

iv. দর্শন শিক্ষার ভবিষ্যৎ নির্ধারক:
শিক্ষার সকল সমস্যার মূলে রয়েছে দার্শনিক সমস্যা। দর্শন শিক্ষার লক্ষ্য ও জীবনের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে। ব্যক্তিগত চরিত্র ও সমাজের চাহিদাকে কেন্দ্র করে পাঠ্যক্রম রচিত হয় দার্শনিক ভিত্তির উপর।

v. নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে দর্শন ও শিক্ষা:
শিক্ষার একটি প্রধান উদ্দেশ্য হল নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তোলা। সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে মূল্যবোধেরও পরিবর্তন ঘটে। দর্শন এই মূল্যবোধ সৃষ্টিতে শিক্ষাকে দিকনির্দেশনা দেয়।

খ. ব্যবহারিক দিক (Practical Aspect)

i. শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণ:
শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণে দর্শন বিশেষভাবে সাহায্য করে। শিক্ষার লক্ষ্য জীবনের লক্ষ্যের সাথে সম্পর্কিত। শিক্ষাবিদ রস (Ross)-এর মতে, "The Education aims and methods are corollaries of philosophical doctrines." – অর্থাৎ, শিক্ষার লক্ষ্য ও পদ্ধতি হল দার্শনিক মতবাদের অনুষঙ্গ।

ii. পাঠ্যক্রম রচনা:
শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণের পাশাপাশি পাঠ্যক্রম রচনায় দর্শন সাহায্য করে। পাঠ্যক্রম হল শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথ। কোন বিষয়গুলি পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হবে, তা দর্শন নির্ধারণ করে।

iii. শিখন পদ্ধতি নির্ধারণ:
শিক্ষণ পদ্ধতিকে ফলপ্রসূ করে তুলতে দর্শন সাহায্য করে। বিভিন্ন দার্শনিক মতবাদ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষণ পদ্ধতির প্রবর্তন করেছে:

· ভাববাদী দর্শনে: প্রশ্ন-উত্তর পদ্ধতি, আদর্শ অনুকরণ পদ্ধতি, বিতর্ক পদ্ধতি।
· প্রকৃতিবাদী দর্শনে: আত্মশিখন পদ্ধতি, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, আবিষ্কার পদ্ধতি।
· প্রয়োগবাদী দর্শনে: সমস্যা সমাধান পদ্ধতি, প্রকল্প পদ্ধতি, পরীক্ষামূলক পদ্ধতি।

iv. শৃঙ্খলার প্রকৃতি নির্ধারণ:
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কী ধরনের শৃঙ্খলা থাকবে, তা নির্ধারণে দর্শন সাহায্য করে। বিভিন্ন দর্শন বিভিন্ন ধরনের শৃঙ্খলার কথা বলে।

v. শিক্ষার্থীর স্থান নির্ধারণ:
শিক্ষা প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীর স্থান দর্শন দ্বারা নির্ধারিত হয়।

· ভাববাদী দর্শনে: শিক্ষক জ্ঞানভাণ্ডার, তাই তার স্থান প্রথম।
· প্রকৃতিবাদী দর্শনে: শিক্ষার্থীই শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু, তাই তার স্থান প্রথম।
· জন লক (John Locke)-এর মতে, "The mind of a child is a clear slate (Tabula Rasa) on which many impacts can be made."
· আধুনিক দার্শনিকগণ শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে চিন্তা করার সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছেন।

সারসংক্ষেপ

উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, দর্শন ও শিক্ষা অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। দর্শন হল তত্ত্ব বা চিন্তার ক্ষেত্র, আর শিক্ষা হল সেই তত্ত্বের প্রায়োগিক রূপ। দর্শন ছাড়া শিক্ষা লক্ষ্যহীন এবং শিক্ষা ছাড়া দর্শন বাস্তবায়নহীন। তাই শিক্ষাকে সফল ও গতিশীল করতে দর্শনের ভূমিকা অপরিসীম।

মন্তব্যসমূহ